নিজস্ব প্রতিবেদক:
গ্যাস সঙ্কটে দেশের শিল্পণ্ডকারখানার উৎপাদনে ভাঁটা পড়েছে। বড় ও মাঝারি শিল্পণ্ডকারখানার মালিকরা সরকারের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে গ্যাস কিনলেও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় গ্যাসভিত্তিক ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ (শিল্পণ্ডকারখানার নিজস্ব বিদ্যুৎ) উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে কারখানাগুলোর উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে শিল্পণ্ডকারখানায় গ্যাসের সংকট চলছে। উৎপাদন অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় গ্যাস না পেয়ে সরকারের কাছে ধরনাও দিচ্ছেন শিল্পণ্ডকারখানার মালিকরা। পেট্রোবাংলা এবং শিল্পখাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে পাইপলাইনে সরবরাহ করা মোট গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বোরো মৌসুমের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সার কারখানাগুলোর উৎপাদন ঠিক রাখতে সেখানেও গ্যাস সরবরাহ ঠিক রাখতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ ঢাকার আশপাশের এলাকায়, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে। তাছাড়া রাজধানীর অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতেও গ্যাসসংকট চলছে। গ্যাসের চাপ না থাকায় ঢাকার আশপাশের সিএনজি স্টেশনগুলো দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজারের মহেশখালীতে মার্কিন কম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মেরামত কাজ চলছে। আমদানি করা এলএনজির একটি অংশ এই টার্মিনাল দিয়ে জাতীয় সরবরাহ লাইনে যুক্ত হয়। পেট্রোবাংলা বলছে, চলমান সংকটে এই মেরামতকাজ কোনো প্রভাব ফেলছে না। তবে দ্রুত গ্যাস সমস্যা সামাধানে কোনো আশার বার্তাও দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করেছে প্রায় আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। স্বাভাবিক সময়ে পেট্রোবাংলা সর্বোচ্চ তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারে। এদিকে গ্যাসের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে নিজস্ব ৪০টি কারখানায় উৎপাদন করে দেশের শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় এই গ্রুপের তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল আছে। শিল্প গস্খুপটির উৎপাদনমুখী ৪০টি কারখানার মধ্যে গ্যাসসংকটের কারণে ২০টি বেশির ভাগ সময়ে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দৈনিক ১৫ হাজার টনের উৎপাদনক্ষম কারখানাগুলোতে এখন মাত্র এক হাজার ৫০০ টন উৎপাদন হয়। চারটি পেপার মিলের মধ্যে মাত্র একটি চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে। চারটি সিরামিক ইউনিটের মধ্যে একটি ইউনিট পালাক্রমে চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে। দ্রুত গ্যাসসংকটের সমাধান না করলে কারখানা চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
এই সংকট দীর্ঘ হলে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। শ্রমিক-কর্মচারীরা বেকার হয়ে যাবেন। আর দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত পোশাকশিল্প। এই শিল্পে ক্যাপটিভ পাওয়ার, বয়লার ও ওয়াশিং প্লান্টের জন্য গ্যাসের দরকার। কিন্তু গ্যাসসংকটে পণ্য উৎপাদনের ডেডলাইন পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে কারখানাগুলো। বর্তমানে পোশাক খাতের উৎপাদন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেছে। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার নিটওয়্যার রপ্তানিকারকরা গ্যাসসংকটের মধ্যে আছেন। বর্তমানে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
তাছাড়া দেশের প্রধান রপ্তানি খাত নিট গার্মেন্টসের বেশির ভাগই নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। ১৪৭টির মতো ডায়িং এবং প্রায় ৪২০টি নিট কারখানায় কাজ করছেন ১৫ লাখ শ্রমিক। মাসে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার নিট পণ্য রপ্তানি হয় এই কারখানাগুলো থেকে। কিন্তু গ্যাসসংকটের কারণে এই হিসাব অনেকটাই নিম্নমুখী। একইভাবে দেশের সিরামিক খাতের বড় ধরনের ৭০টির বেশি কারখানা গ্যাসসংকটে ভুগছে। ফলে ওসব প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারেও চাহিদা ও সময়মতো টাইলস ক্রেতাদের দিতে পারছে না তারা।
মালিকরা বলছেন, এখন ছয় থেকে আট ঘণ্টা গ্যাসের প্রেসার পাওয়া যায়। সিরামিক উৎপাদনে মোট ব্যয়ের ১৫ শতাংশই হয় গ্যাসের জন্য। গ্যাসসংকটে বর্তমানে পণ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বিদেশি ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ফিলিং স্টেশনের মেশিনে প্রতি ঘণ্টায় ৬০০ কিউবিক মিটার গ্যাস পাওয়ার কথা। সেখানে পাওয়া যায় মাত্র ১৬০ থেকে ১৭০ কিউবিক মিটার। পেসার ১৫ পিএসআই পাওয়ার কথা থাকলেও পাওয়া যায় দুই থেকে পাঁচ পিএসআই। সারা দেশে পাঁচ শতাধিক সিএনজি ফিলিং স্টেশন আছে। এর ৮০ শতাংশ স্টেশনেই গ্যাসের চাপ নেই। তাই দিনের বেশির ভাগ সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আবার সরকারি নির্দেশে রাত ৮টার পর গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়।
আরও পড়ুন
কার দিকে, কেন তেড়ে গিয়েছিলেন তামিম
২২০ চলচ্চিত্র নিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
রংপুরে তারুণ্যের উৎসব-২০২৫ উপলক্ষ্যে ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন