November 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, August 20th, 2024, 7:03 pm

রাজস্ব বাড়াতে করজাল সম্প্রসারণের কথা ভাবছেন এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান

ফাইল ছবি

করদাতাদের জন্য জবরদস্তি ও ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে এমন কোনো উদ্যোগ না নিয়ে করজাল সম্প্রসারণের কথা ভাবছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বর্তমানে রাজস্ব আদায়ের ৬৭ শতাংশ আসে কাস্টমস ডিউটি ও মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) মতো পরোক্ষ কর থেকে। বাকিটা আসে আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর থেকে।

গত রবিবার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম বৈঠকে এনবিআরের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান কর্মকর্তাদের বলেন, ‘আমাদের এই খাতে (করজাল প্রশস্তকরণ) মনোযোগ বাড়াতে হবে।’

সরকারি নথি অনুযায়ী, আয়কর সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি কার্যকর ব্যবস্থা।

নতুন আয়কর আইন, ২০২৩ বাস্তবায়নের পরের পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে করের হার বাড়ানোর পরিবর্তে করের হার যৌক্তিকীকরণ, বিশেষ করে উচ্চতর কর-ভিত্তি সম্প্রসারণ, ই-টিআইএনধারীদের রিটার্ন দাখিলে উৎসাহিত করা এবং স্বেচ্ছায় কমপ্লায়েন্স উৎসাহিত করার মাধ্যমে কর নীতির সংস্কার করে আরও বেশি করদাতাকে করের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, বর্তমান আয়কর আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে আরও করদাতাবান্ধব করে তুলতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে, যাতে করদাতারা কর প্রদানে উৎসাহিত বোধ করেন।

তিনি বলেন, ‘কোনো দেশের কর কোন কোন খাত থেকে আসে সেটা দিয়ে দেশ কতটুকু সভ্য তা পরিমাপ করা হয়। সেই সভ্যতা থেকে আমরা অনেক দূরে। আমাদের এই প্রত্যক্ষ করের দিকে নজর দিতে হবে, যাতে রাজস্ব আদায়ে এ খাতের অবদান বাড়াতে পারি। এর জন্য মূলত প্রয়োজন সক্ষমতা ও কঠোর পরিশ্রম।

করজাল বড় আকারে সম্প্রসারণে এনবিআরের ব্যর্থতা স্বীকার করেন তিনি।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এনবিআর কেবল আইনে নতুন বাধ্যবাধকতা যুক্ত করে করজাল সম্প্রসারণ করতে পারে এবং আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণকে কর নিবন্ধনে বাধ্য করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘এটুকুই। আমরা তাদের সরকারি সেবা নিতে কর নিবন্ধন করতে বাধ্য করেছি, পরে আয়কর রিটার্ন দাখিল দেখানো বাধ্যতামূলক করেছি।’

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৫.২ শতাংশ কর নিবন্ধিত, যেখানে ভারতে এটি ২৩.০৮ শতাংশ।

তাই করজাল সম্প্রসারণের অপার সুযোগ রয়েছে বলে আশা প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) মধ্যে সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে তথ্য বিনিময়-গোছানো-সংরক্ষণ ও নির্ভুলতা যাচাইয়ের জন্য সহযোগিতার ফলে নতুন করদাতা শনাক্তকরণ এবং কর ফাঁকি শনাক্ত করে বকেয়া আদায় সহজতর হয়েছে।

কর পরিশোধকে আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় করার লক্ষ্যে উৎসে কর কর্তন ও সংগ্রহ প্রক্রিয়া মনিটরিংয়ের জন্য ই-টিডিএস পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এবং রিটার্ন দাখিলের জন্য ই-রিটার্ন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, এই উদ্যোগের ফলে করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করা সহজ হয়েছে এবং নতুন করদাতার সংখ্যাও বাড়ছে।

বর্তমানে ই-টিআইএন নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত এনবিআর করদাতা, প্রধানত ব্যক্তি থেকে ৪১ লাখ কর রিটার্ন পেয়েছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।

নথিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন নীতিগত পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণের (পিএসআর) প্রয়োজনীয়তা ট্যাক্স রিটার্নের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘আমাদের করদাতাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং আমাদের যে সম্পদ আছে তা দিয়ে কার্যকরভাবে কাজ করতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে কেন এই বিপুল সংখ্যক করদাতা নিবন্ধন করছেন না।’

এ বিষয়ে করদাতাদের আলোকিত করার ওপর জোর দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদানের বিষয়ে লেখা ও কার্টুন তৈরি করে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মধ্যে বিতরণ করার পরিকল্পনা করছে রাজস্ব আদায়কারী কর্তৃপক্ষ। এজন্য শিশুদের উপযোগী কর সংক্রান্ত লেখা ও কার্টুন তৈরি কথা ভাবা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে আমরা কর দানকে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি এবং কলেজ স্তরের জন্য আমরা এটি তাদের পাঠ্য হিসেবে তৈরি করতে পারি।’

আয়কর একটি দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চালিকা শক্তি এবং দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রত্যক্ষ কর সাধারণত প্রগতিশীল ভিত্তিতে আরোপ করা হয়, করের বোঝা সমাজে সমতা অনুযায়ী বণ্টিত হয়, যাতে উচ্চ আয়ের ব্যক্তিরা নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের তুলনায় আয়কর হিসেবে তাদের আয় বা সম্পদের একটি বড় অংশ প্রদান করে।

আয় পুনর্বণ্টনের মাধ্যমে সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আয়কর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদায় করা মোট রাজস্বের প্রায় ৩৩ শতাংশ আসে আয়করের মাধ্যমে। আয়কর আদায়ে গড় প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের বেশি।

সরকারি নথি থেকে জানা যায়, করদাতা, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব আয়কর নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে ২০৩১ সালের মধ্যে প্রত্যক্ষ করের অবদান ৪২ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে।

—–ইউএনবি