অনলাইন ডেস্ক :
পাঁচ বছর আগে নরওয়েজিয়ান জলসীমায় পাওয়া গিয়েছিল একটি বেলুগা তিমি। নরওয়ের উপকূলে এই সাদা রঙের তিমিটি নিয়ে দারুণ রহস্য তৈরি হয়। কারণ বেলুগা প্রজাতির ওই তিমির গলায় ক্যামেরা এবং চিপ বসানো রুশ একটি বেল্ট পাওয়া যায়। ধারণা জন্মে, তিমিটি হয়তো সাগরে রাশিয়ার একটি গুপ্তচর। সেই বেলুগা তিমিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে তিমিটির ওপর নজরদারি করা এক অলাভজনক সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) জানানো হয়েছে।
নরওয়েজিয়ান পাবলিক ব্রডকাস্টার এনআরকে জানিয়েছে, দক্ষিণ নরওয়েতে এক বাবা এবং তার ছেলে মাছ ধরতে সমুদ্রে গিয়েছিলেন, সেখানেই তারা তিমিটির মৃতদেহ ভাসতে দেখেন। তিমিটির নাম ‘হভালদিমির’। তিমির জন্য নরওয়েজিয়ান শব্দের সংমিশ্রণ এবং রাশিয়ান রাষ্ট্রপতি ভøাদিমির পুতিনের প্রথম নাম দিয়ে এই নামকরণ করা হয়েছিল। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শনিবার বেলুগার প্রাণহীন দেহটি নরওয়ের রিসাভিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আবিষ্কার করা হয়।
মেরিন মাইন্ড নামে একটি সংস্থা বছরের পর বছর ধরে তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। মেরিন মাইন্ডের প্রতিষ্ঠাতা সেবাস্টিয়ান স্ট্র্যান্ড এএফপিকে বলেছেন, ‘গতকাল (রোববার ) তার খোঁজ করার সময় হাভালদিমিরকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তাকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পাওয়ার ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় আগে বেঁচে থাকার বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম। এর পরে তার মৃত্যু হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘আমরা তার দেহাবশেষ উদ্ধার করতে পেরেছি এবং তাকে একটি হিমাগারে রেখেছি। তার সঙ্গে আসলে কী ঘটেছে তা পরীক্ষা করা হবে।’
সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী স্ট্র্যান্ড নরওয়েজিয়ান পাবলিক ব্রডকাস্টার এনআরকে বলেছেন, ‘তিমিটির মৃত্যুর ঘটনা ভয়ংকর। গত শুক্রবারও ভালো ছিল তিমিটি। তাই আমাদের এখানে খুঁজে বের করতে হবে আসলে এখানে কী ঘটেছে।’ তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, প্রাণীটির শরীরে বড় কোনো বাহ্যিক আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি এবং কী কারণে মৃত্যু হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। মেরিন মাইন্ড এনজিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছে, ‘হভালদিমির শুধু একটি বেলুগা তিমি ছিল না। হভালদিমির ছিল আশার আলোকবর্তিকা, সংযোগের প্রতীক এবং মানুষ ও প্রাকৃতিক বিশ্বের মধ্যে গভীর বন্ধনের অনুস্মারক।’ হাভালদিমির আনুমানিক ১৪ বা ১৫ বছর বয়সী ছিল। বেলুগা তিমি সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বেঁচে থাকতে পারে।
বেলুগা তিমি ছয় মিটার (২০ ফুট) লম্বা এবং সাধারণত গ্রিনল্যান্ড, উত্তর নরওয়ে এবং রাশিয়ার আশপাশে বরফ শীতল পানিতে বসবাস করে। ২০১৯ সালে রাশিয়ার সামুদ্রিক সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার (১৯০ মাইল) দূরে নরওয়ের উত্তরে ইনগোয়া দ্বীপের কাছে হাভালদিমিরকে প্রথম পাওয়া যায়। দ্বীপের কাছে জেলে নৌকার পাশে হঠাৎ সাদা রঙের কোনো একটি প্রাণীর মাথা ভেসে উঠতে দেখা যায়। দৃশ্যটি বিস্ময়ের সৃষ্টি করে, কারণ সাদা রঙের বেলুগা তিমি দক্ষিণ আর্কটিক সাগরের এই অংশে দেখা যায় না। বিস্ময় আরো বাড়ে, যখন দেখা যায় তিমিটির শরীরে শক্ত করে একটি বেল্টের মতো বস্তু। জেলেদের কাছে প্রথম মনে হয়েছিল, তিমিটি যেন বিপদে পড়ে সাহায্য চাইছে। একজন জেলে সাহস করে নিরাপদ পোশাক পরে বরফ-শীতল পানিতে নেমে তিমিটির শরীর থেকে বেল্টের মতো জিনিসটি খুলে আনেন। ওই বেল্টের সঙ্গে একটি ক্যামেরা লাগানো এবং সেই সঙ্গে রয়েছে একটি ইলেকট্রনিক চিপ। চিপের ওপর লেখা ‘সেন্ট পিটার্সবার্গের তৈরি যন্ত্র’।
তখন জোয়ার হেস্টেন নামে এক জেলে ছবি তুলে সেটি অউডান রিকার্ডসেন নামে একজন সমুদ্র জীববিজ্ঞানীর কাছে পাঠান। ওই বিজ্ঞানী তখন সাহায্যের জন্য নরওয়ের মৎস্য বিভাগের শরণাপন্ন হন। সঙ্গে সঙ্গে নরওয়ের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করে। তাদের পক্ষ থেকে বিবিসিকে বলা হয়েছিল, ‘তিমিটিকে খুব সম্ভবত রাশিয়া তাদের গবেষণার কাজে লাগাচ্ছিল।’ ১০ মে ২০২১ সালের বিবিসি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাশিয়া বহুদিন ধরেই সামরিক উদ্দেশ্যে ডলফিনের মত সাগরের স্তন্যপায়ী প্রাণী ব্যবহার করছে।
বেশ আগে ব্যারেন্টস অবজারভার নামে নরওয়ের একটি ওয়েবসাইটে রাশিয়ার মারমানস্ক নামে একটি জায়গার কাছে তিনটি রুশ নৌঘাঁটির কাছে তিমি আটকে রাখার খাঁচার অস্তিত্বের প্রমাণ হাজির করা হয়েছিল। কেন এসব খাঁচা, এগুলোর ভেতর তিমি কেন – এ নিয়ে রুশ সামরিক বাহিনী কখনোই মুখ খোলেনি। হভালদিমির মানুষের প্রতি খুব আগ্রহী ছিল এবং মানুষের হাতের সংকেতে সাড়া দিত। যার ফলে নরওয়ের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা অনুমান করে, নরওয়েজিয়ান জলসীমা অতিক্রম করার আগে একটি গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাকে রাশিয়ায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল। মস্কো হভালদিমির নিয়ে অভিযোগের কোনো প্রতিক্রিয়া কখনো জানায়নি। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি
আরও পড়ুন
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে ৩৮ জনের মৃত্যু, আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় শোক পালন
বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষ বাড়ছে, কমছে ধনী দেশের সাহায্য
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছেই, একদিনে নিহত ৫৮