নিজস্ব প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক দুজন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, দুজন মুখ্য সচিবসহ শেখ হাসিনা সরকারের সাতজন সচিবের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফারুক আহম্মেদ বলেছেন, একটি খুনের ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মামলায় সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন (মামলায় সাবেক বলা হলেও মাহবুব হোসেন বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব), সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও আহমেদ কায়কাউস, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও ফয়েজ আহমেদ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।
একই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়াদ্দারকে আসামি করা হয়।
পুলিশসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যাত্রাবাড়ীতে মেহেদী হাসান (১৮) নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ৯৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। নিহত মেহেদীর চাচা মো. নাদিম এ মামলা করেছেন। মামলার বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে একাধিকবার বাদীর মুঠোফোনে করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
মামলার এজাহারে বলা হয়, যাত্রাবাড়ী থানার রায়েরবাগে গত ১৯ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল চলছিল। তখন শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিরা উসকানিমূলক বক্তব্য, হুকুম ও নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষার্থীদের দমনের ঘোষণা দেন। তখন কামরাঙ্গীরচরের টেকেরহাট ইউনিট আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোকনসহ অন্য আওয়ামী লীগের নেতারা ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে সশস্ত্র হামলা চালান। ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে বুলেট ও গুলি ছোড়েন আসামিরা। তখন মেহেদী হাসানের থুতনিতে গুলি লাগে। তাঁকে স্থানীয় সালমান হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক দুজন মুখ্য সচিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হয়েছিলেন। আর আবুল কালাম আজাদ জামালপুর-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।
যাত্রাবাড়ীতে মেহেদী হাসান খুনের মামলা ছাড়াও আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে আরেকটি মামলা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয় ঢাকার আদালতে। এর পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ২২৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৯৩টি মামলায় হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অধিকাংশ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া তাঁর সরকারের সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা, পুলিশের সাবেক আইজিপি, ডিএমপির সাবেক কমিশনারসহ পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়।
হাতিরঝিলে যুবককে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর হাতিরঝিলে মো. ইসমাইল (৪৬) নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতে এ মামলা করেন ইসমাইলের স্বজন আজিজুর রহমান। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন আদালত। মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই বেলা তিনটার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র-জনতা হাতিরঝিলের বেটারলাইফ হাসপাতালের সামনে মিছিল করছিল। তখন আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেনসহ তাঁদের এক–দেড় শ নেতা–কর্মী ও সন্ত্রাসীরা মিছিলে গুলি চালায়। তখন সেখানে অবস্থান করা ইসমাইল গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে বেটার লাইফ হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মামলায় সাবেক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ, ডিএমপির সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদ এবং পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আতিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি
আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোর মামলায় কনস্টেবল মুকুল কারাগারে
অগ্নিকান্ডে মিঠাপুকুরের নয়ন একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবার