December 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, October 21st, 2024, 5:17 pm

চাকরির বয়সসীমা: ‘ যুক্তির চেয়ে আবেগ জয়যুক্ত হইল’

নিজস্ব প্রতিবেদক
দাবিদাওয়ার চাপে জেরবার অন্তর্বর্তী সরকার ৩২–ঊর্ধ্বদের আন্দোলনের মুখে বয়স বিবেচনা কমিটি গঠন করে। সাবেক সচিব মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত সেই কমিটি ইতিমধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স পুরুষদের ৩৫ ও নারীদের ৩৭ করার সুপারিশ করেছে।

২ অক্টোবর যখন কমিটি আলোচনার জন্য বসেছিল, তখনই এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে বয়স বাড়ছে। বয়স বিবেচনা কমিটির প্রধান মুয়ীদ চৌধুরী সেদিন সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, সেশনজট, করোনাসহ বিভিন্ন কারণে চাকরিতে প্রবেশের বিদ্যমান বয়স বাড়ানো উচিত।

অসুখ–বিসুখ, করোনা নাহয় দৈব–দুর্বিপাক। কিন্তু বাঁধাধরা বা ক্রনিক সেশনজট কেন হেতু হবে? আগে চাকরির বয়সের চাপ ছিল বলে ‘সেশনজট নিপাত যাক’ আওয়াজ তুলে সেশনজটের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর একটা যৌক্তিক ভিত্তি ছিল। এখন সেটাও আর থাকল না।

শিক্ষকেরা এখন কনসালট্যান্সি আর বেশি বেশি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়াটে শিক্ষক হয়ে দিন গুজরান করবেন। হয়তো বলবেন—৩৫ বছর ম্যালা সময়; ধীরে সুস্থে চলো, সেশনজট তোমাকে পথে বসাবে না। রায়ের বাইরে যেমন বিচারকের পর্যবেক্ষণ থাকে, মুয়ীদ কমিটিও তেমনি পর্যবেক্ষণ দিতে পারত। বলতে পারত, যেসব কারণে পড়ালেখা শেষ করতে করতে চাকরির বয়স পেরিয়ে যায়, সেগুলো রোধে, বিশেষ করে সেশনজট রোধে দায়িত্বের সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বোঝা যায়, তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কমিটিকে। আবার সিদ্ধান্তে নারীবান্ধবতার প্রলেপ দিতে গিয়ে নারীদের একটু বাড়তি খাতির করা হয়েছে। যেটা কোনো দাবিতেই ছিল না। বরং এবার কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না রাখার পক্ষেই বারবার মত দিয়েছিলেন। ফেসবুকে অনেকেই জানতে চেয়েছেন, নারীদের বয়সসীমা ৩৭ করার যৌক্তিকতা কী?

এ ক্ষেত্রে মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, আরও অধিকসংখ্যক নারী যেন চাকরিতে আসতে পারেন, সে জন্য তাঁরা এই সুপারিশ করেছেন। তিনি মনে করেন, ‘ছেলেদের মতো ওই বয়সে মেয়েদের পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফ্যামিলি অবলিগেশন্স থাকে, বিয়ে হয়ে যায়…। এ ছাড়া আমাদের নারী কর্মকর্তার সংখ্যা তুলনামূলক কম।…যাতে নারীরা এ সুবিধাটা পান, তাঁরা আসতে পারেন।’

বয়স বিবেচনা কমিটির এসব বয়ান কতটা তথ্যভিত্তিক আর কতটা ধারণাপ্রসূত? সেটা আজ নাহয় কাল কেউ জিজ্ঞাসা করবেই। গত ১০ বছরের তথ্য দেখলেই বোঝা যাবে মেয়েরা উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত এগিয়ে থাকলেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সংখ্যায় পিছিয়ে পড়েন। সমস্যাটা এখানেই। স্নাতকে ভর্তি হওয়ার আগে সংখ্যায় কমে গেলে সময়মতো চাকরির দরখাস্ত তাঁরা করবেন কীভাবে? যোগ্যতাসম্পন্ন নারীদের চাকরিতে আনতে হলে কাজ করতে হবে গোড়ায়। তাঁরা যাতে নির্বিঘ্নে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বয়সসীমা শিথিল করে যোগ্য নারীদের প্রশাসনে আনা যাবে না।