December 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, October 26th, 2024, 11:10 pm

সিলেট ভ্রমণে ঘুরে আসুন মালিনীছড়া চা বাগানে

নিজস্ব প্রতিবেদক
মালিনীছড়া চা বাগান যেন প্রকৃতির হৃদয়ে আঁকা এক জীবন্ত শিল্পকর্ম। সিলেটে অবস্থিত এই বিস্তীর্ণ সবুজ ভূমি বিশুদ্ধতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের প্রথম চা বাগান হিসেবে পরিচিত, এটি ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ বণিক লর্ড হার্ডসন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজও এটি তার আপন মহিমায় উদ্ভাসিত।

চা বাগানের প্রতিটি প্রান্ত যেন একটি কাব্যের মতো। যেখানে শতবর্ষী গাছের ছায়া, চা পাতার সবুজে মোড়ানো ঢেউ খেলানো পাহাড় প্রকৃতির গভীরতা বয়ে নিয়ে চলে। নিয়মিত চা শ্রমিকরা এখানে এসে চা পাতা সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের মিষ্টি হাসি, স্নিগ্ধ মুখাবয়ব আর শ্রমের ছন্দ যেন জীবনের মেলবন্ধনের এক নিখুঁত প্রতিচ্ছবি।

শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের শ্রমে চা পাতাগুলো সরলতা আর শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে উঠে। শ্রমিকরা সকালে ঝুড়ি হাতে বাগানে নামেন, সূর্যের আলোতে ঝিলমিল করে ওঠা চা পাতা সংগ্রহ করেন। দিনশেষে তাদের ক্লান্ত মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা যায়, যেন এই প্রকৃতির মাঝে নিজেদের নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিতে পারার আনন্দে তারা বিভোর।

বাগানের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে নীল আকাশ, সবুজ চা গাছ আর সাদা মেঘের মিতালী দেখতে মুগ্ধ হবেন আপনি। মালিনীছড়া চা বাগানে সূর্যাস্তের সময়ের দৃশ্য আরো মনোমুগ্ধকর। পাহাড়ের আড়ালে সূর্য ঢলে পড়ে যখন, তখন বাগানজুড়ে ছায়া-আলোর খেলা চলে। চা গাছের পাতায় পড়ে থাকা সূর্যের শেষ আলোর কিরণ যেন চা পাতার রঙের সঙ্গে মিশে রূপকথার আবেশ তৈরি করে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বাগানটিতে এক ধরনের নিস্তব্ধতা নেমে আসে। পাখির কলতান ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে, আর বাগানের প্রতিটি গাছ, প্রতিটি পাতা যেন নিজেদের মধ্যে ডুবে যায়। শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, আলোর মিটিমিটিতে জ্বলে ওঠে জোনাকি পোকা।

মালিনীছড়া চা বাগান প্রকৃতির এক নীরব কবিতা, যা যুগের পর যুগ ধরে একইরকম স্নিগ্ধতায় রয়ে গেছে। এই বাগান শুধু একটি স্থান নয়, এটি এক জীবন্ত ইতিহাস। যেখানে প্রকৃতি আর মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক তৈরি হয়।

চা পাতার দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাগানের সবুজে মুড়ানো ঢেউ খেলানো পাহাড় আর প্রকৃতির স্নিগ্ধ ছোঁয়া মিলিয়ে যেন মালিনীছড়া এক আকর্ষণীয় মহাকাব্যে পরিণত হয়েছে।