নিজস্ব প্রতিবেদক
তিনটি সিঁড়ি পেরোনো শেষ। সামনে আর একটি। ৩০ অক্টোবর সেটি পেরোতে পারলেই সাফ নারী ফুটবলের শিরোপা ধরে রাখবে বাংলাদেশ। গতকাল সেমিফাইনালে ভুটানকে ৭-১ গোলে উড়িয়ে ফাইনালে জায়গা নেওয়ার পরদিন আজ বাংলাদেশ দলের হোটেলে ফুরফুরে একটা হাওয়া।
কিন্তু দলে সিনিয়র-জুনিয়র বিতর্ক, কোচ পিটার বাটলার সিনিয়রদের পছন্দ করেন না ইত্যাদি নিয়ে কোথায়ও যেন চাপা ক্ষোভও রয়েছে। নইলে এই প্রতিবেদকের এক প্রশ্নে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন কেন বললেন, ‘এখন কিছু বলব না, যা বলার ফাইনালের পরে বলব।’
কিছু না বলেও অনেক কথা বলেছেন। ভারত ম্যাচের আগে তাঁর একটা বক্তব্য কোচের কাছে গেছে। সাবিনা বলেছিলেন, সব ম্যাচের আগেই তিনি বাংলাদেশ নারী দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। ভারত ম্যাচে জিততে হবে, গোলাম রব্বানীর এমন বার্তাও দলের মধ্যে পৌঁছে দেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই কি না, ভুটান ম্যাচের আগের দিন নারী দলে অসন্তোষ ছড়ানোর অভিযোগ এনে গোলাম রব্বানীর দিকে তির ছোড়েন বাটলার।
নাম না নিয়ে বাটলার বলেছিলেন, নারী দলের সাবেক কোচ (গোলাম রব্বানী) বাইরে থেকে মেয়েদের খেপিয়ে তুলছেন তাঁর বিরুদ্ধে। নানাভাবে দলে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছেন। দলকে বিরক্ত, প্ররোচিত করছেন এবং অসত্য তথ্য দিচ্ছেন। গোলাম রব্বানী অবশ্য এসব উড়িয়ে উল্টো সঠিকভাবে দল পরিচালনা করতে না পারার অভিযোগ এনেছেন বাটলারের বিরুদ্ধে।
আসলে দ্বন্দ্বটা কোথায়? আজ টিম হোটেলে সঙ্গে আলাপকালে সাবিনাকে প্রশ্নটা করা হলে তিনি পাল্টা বলেন, গোলাম রব্বানী সম্পর্কে জেনেই আসলে তাঁর (বাটলার) কথা বলা উচিত। সাবিনা কথায়, ‘স্যারকে নিয়ে উনি (বাটলার) আসলে কতটুকু জানেন। আপনি তখনই তাঁকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন, যখন আপনি তাঁর সম্পর্কে জানেন। ১৪ বছর ধরে আপনি যে মেয়েগুলোকে…বলা যেতে পারে…সন্তানদের মতো বড় করেছেন তাদের সঙ্গে সঙ্গে কে কেমন আচরণ করছেন, সেটাও একটা বিষয়। সেটা দেখে যদি ওনার (গোলাম রব্বানী) খারাপ লেগে থাকে, উনি কোনো মন্তব্য করে থাকেন, সেটায় আসলে অন্যায় কিছু না বা দোষের কিছু না।’
গোলাম রব্বানী বাফুফের চাকরি ছেড়েছেন গত বছর। কিন্তু কাঠমান্ডুতে নারী দলের সঙ্গে না থেকেও যেন আছেন তিনি। সেমিফাইনালে ম্যাচসেরার পুরস্কার গোলাম রব্বানীকে উৎসর্গ করেছেন তহুরা খাতুন। এই যে গোলাম রব্বানীর না থেকেও থাকা স্বাভাবিকভাবেই পছন্দ নয় বাটলারের। এসব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাবিনার নিজের হতাশাও লুকাননি, ‘যদি দেশের মানুষও ওনার (গোলাম রব্বানী) অবদানের কথা ভুলে যায়, যদিও আমরা বাঙালি মূল্যায়ন করতে জানি না, তারপরও যদি ভুলে যাই, এটা দুঃখজনক।’
মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা পাকিস্তান সঙ্গে হতাশার ড্রর পরদিন বলেছিলেন, পিটার বাটলার সিনিয়রদের পছন্দ করেন না। আসলেই কি তাই? এটা নিয়ে সাবিনার কথায় মনিকার সুরই ধরা পড়ল, ‘প্রথম ম্যাচ যদি দেখেন… দ্বিতীয় ম্যাচে তো আমরা ফোর্স করে টিম করাইছি। তারপরও করতে চাননি (কোচ)। আমাদের বলেছিলেন, “খেলো তাহলে সিনিয়ররা, যেহেতু খেলতে চাও। প্রমাণ করো। রেজাল্ট বের করো।’ আমরা চেষ্টা করেছি। তাঁর ওপরে রাগ–ক্ষোভ থেকে নয়, আমরা খেলতে পারি…এসব ম্যাচে কতটা দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারে। মেয়েরা সেটা করেছে।”’
পিটার বাটলারের জন্য দলে শ্রদ্ধা নেই। এমনটাও মনে করেন কেউ কেউ। বিষয়টা নিয়ে সাবিনা বলেন, ‘সেই জায়গা থেকে আমিও তো ১৪ বছর ফুটবল খেলে আসছি, আমি সেই সম্মানটা পাচ্ছি কি না, সেটাও তো বড় ব্যাপার। উনি যেটা করছেন, সেটা অবশ্যই ওনার অবস্থান থেকে সম্মান করি। খেলোয়াড়েরাও সেটা করে।’
এসেছে মেয়েদের নিয়মিত বেতন পাওয়ার প্রসঙ্গটাও। সাবিনা বলেন, ‘বেতন দুই-তিন মাস গ্যাপ পড়ে যায়। বেতন ঠিকই দেয় কিন্তু দেরি করে দেয়। এখনো সেপ্টেম্বরের বেতন বাকি। বেতনটা সময়মতো আসলে ভালো হয়। বেতনের কথা বলেই আসছি। নতুন সভাপতির একটা সাক্ষাৎকার দেখেছি। উনি বলেছেন, মেয়েদের নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা আছে তাঁর, যেটা শুনে আমার ভালো লেগেছে।’
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়ালের কাছে কী প্রত্যাশা, সেটিও বললেন সাবিনা। সেটা অবশ্য খুব বেশি কিছু নয়, ‘মেয়েদের জন্য বার্ষিক ক্যালেন্ডার থাকা উচিত। যেখানে তাদের শিডিউল জানা থাকবে। সে জানতে পারবে, তৈরি থাকবে। লিগ করা, মাঠে খেলা রাখা…এগুলোই।’
আরও পড়ুন
একটা ধাক্কায় কোহলির ৪ লাখ টাকা জরিমানা
মাশরাফি–সাকিব কি খেলবেন বিপিএলে?
মিমো-নিলয়দের প্যাডসর্বস্ব দল হারালো বিমানবাহিনীকে