নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহীর পবা উপজেলার খড়খড়ি বাজারটি (হাট) কাঁচা সবজির জন্য বিখ্যাত। রাজশাহীর ৯টি উপজেলার মধ্যে পবা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয়। এর বেশির ভাগ বিক্রি হয় এই বাজারে। এই বাজার থেকে রাজশাহী শহরের দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার।
আর এখান থেকে প্রতিদিন সকালে সবজি বিক্রেতারা সবজি কিনে নিয়ে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন বাজারে গিয়ে খুচরা বিক্রি করেন।
এ ছাড়া এ বাজারের সবজি ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যায়। আর সেই সবজি রাজশাহী শহরে মাত্র এক হাত ঘুরেই কেজিতে দাম বাড়ছে ১০-২৫ টাকা। কৃষকরা কৃষিতে লাভ করুন আর ক্ষতি করুন, ব্যবসায়ীরা ঠিকই পকেটে লাভের টাকা ভরছেন।
গত সপ্তাহে পবার খড়খড়ি বাজার ঘুরে কৃষক ও পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মণ পটোল এখানে পাইকারি গত সোমবার বিক্রি হয় সকালে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। সেই পটোল রাজশাহী শহরে গত মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা দরে। এতে কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এক মণ করলা বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা দরে।
সেই হিসাবে এক কেজি করলার দাম পড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা করে। কিন্তু সেটিই রাজশাহী শহরে বিক্রি হয়ে ৮০-১০০ টাকা কেজিতে। আবার বরবটি বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দরে। সেই হিসাবে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকা কেজি।
এ হাটের কৃষক আজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা খ্যাতে ফসল ফলাই (উৎপাদন করি)।
দাম পাই আর না পাই হাটে অ্যাসি বিক্রি করতেই হবি। এখুন একটু দাম প্যাচ্ছি। তাই পটল বিক্রি করি কিছুটা লাভ হচ্ছে। তার পরও সার-বিষের যে দাম, সবজি চাষ করে এখুন লাভ বার করা খুব কঠিন। যখন দাম পাবো না, তখুন ক্ষতি হবি। তাও ফসল তো আমাদের করতেই হয়। আমাদের লাভ হইল না ক্ষতি হইল, সেডা দেখার তো কেউ নাই। যারা আমার কাছ থেকে ফসল কিনি নিয়ে য্যায়ে অন্য যাগাত বিক্রি করতিছে, তাদের লাভ কিন্তু ঠিকিই হচ্ছে।’
আরেক কৃষক নাজমুল হোসেন বলেন, ‘এবার শেষের দিকে এসে ভারি বৃষ্টির কারণে অনেক সবজি ডুবে গেছে। এ কারণে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এবার শীতের শুরুতে অনেক কম হচ্ছে। এতে দাম বেশি পেলেও কৃষকরা খুব একটা লাভবান হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের থ্যাকি জিনিস কিনি লিয়ে যাইয়ে রাজশাহী শহরেই কেজিতে কমপক্ষে ২০ টাকা লাভ করে খুচরা বিক্রেতারা।’
রাজশাহীর তেরোখাদিয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা আসগর আলী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন প্রায় ৮০-৯০ কেজি সবজি বিক্রি করি। ভোরে উঠে বাজার থেকে সবজি কিনে নিয়ে এসে সারা দিনে বিক্রি করি। কখনো কখনো সব মালই বিক্রি হয় না। কিছু মাল থেকেই যায়। পরের দিন বিক্রি করতে গেলে দাম কম পাওয়া যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। এরপর আছে গাড়িভাড়া, দোকানের খাজনা। তাই প্রতি কেজি সবজি বিক্রি করি অন্তত ১০ টাকা লাভ না থাকলে এখন সংসার চালানো যায় না।’
আরেক ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এখন প্রতিদিন ২০০ কেজি সবজি বিক্রি করেও গড়ে এক হাজার টাকা লাভ করা কঠিন। সব খরচ বাদ দিলে ৭০০-৮০০ টাকা টিকে। একটা পরিবারের এখন এই টাকায় কী হয়। তার পরও ব্যবসা করি। সংসার তো চালাতে হবে।’
আরও পড়ুন
সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিবন্ধনসহ যা করতে হবে পর্যটকদের
জান্নাতে বাবা-মায়ের সাথে সন্তানরা যেভাবে মিলিত হবে
কিশমিশ-মনাক্কায় যত উপকার