November 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, November 6th, 2024, 8:28 pm

রাস্তা পারি দেওয়া নয়, সেলফি দাড়িয়ে প্রেম ও রাতে মাদক সেবনের জন্যই ব্যবহার হয় খুলনার ২ ওভারব্রিজ

মাসুম বিল্লাহ ইমরান: খুলনা

খুলনায় প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দুটি ফুট ওভারব্রিজ। তবে এগুলো ব্যবহার করছে না খুলনাবাসী । এখনও সরাসরি সড়কের ওপর দিয়েই হেঁটে পারাপার হচ্ছেন তারা। যারা ব্রিজে উঠছেন, তারা ব্যবহার করছেন দাঁড়িয়ে সেলফি তোলা কিংবা৷টিকটক ভিডিও অথবা কাপল প্রেম করার জন্য! রাতের বেলা মাদক সেবন। স্থান নির্ধারণ ঠিক না হওয়ায় ফুট ওভারব্রিজের প্রতি পথচারীদের আগ্রহ কম বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় তেমন কাজে আসছে না ব্রিজ দুটি, দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়ে গেছে আগের মতোই।
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে গত জুনে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। একই মাসে খুলনা-যশোর মহাসড়কের দৌলতপুরে বিএল কলেজের কাছে আরেকটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এটিতে ব্যয় হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার সকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের ফুট ওভারব্রিজে গিয়ে দেখা যায়, সেটি প্রায় ফাঁকা। দুই শিক্ষার্থী ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন। সৈকত ও তানভীর নামের ওই দুই শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সরাসরি সড়ক পার হতে সময় লাগে মাত্র ১ মিনিট। এ সড়কে গাড়ির তেমন চাপ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে বেরিয়ে ওভারব্রিজে উঠে অন্য পাশে যেতে সময় লাগে ৫/৬ মিনিট বা তারও বেশি। সে কারণে ওভারব্রিজের প্রতি লোকজনের আগ্রহ কম।
পাশের দোকানিরা জানান, ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে সারাদিন খুব অল্পসংখ্যক লোক পারাপার হয়।
যারা ওঠে তাদের বেশির ভাগই ছবি তোলা বা ভিডিও করার জন্য যায়। অধিকাংশ সময় এটি ফাঁকা পড়ে থাকে।
বিএল কলেজের ফুট ওভারব্রিজের ওপরে গিয়ে দেখা যায়, ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে গল্প করছে, কেউ কেউ ছবি তুলছে। মাঝে মাঝে দু’একজন পারাপার হচ্ছে। বেশির ভাগ লোক একপাশ থেকে আরেক পাশে যাচ্ছে ব্যস্ততম সড়কের ওপর দিয়েই।
বিএল কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া ও নুসরাত বলেন, ফুট ওভারব্রিজটা অনেক উঁচু। লোকজন সিঁড়ি দিয়ে উঠে পারাপার হতে চায় না। বিশেষ করে বয়স্ক লোকজন এতে ওঠেন না। এ ছাড়া যেখানে প্রয়োজন ছিল সেখানে তৈরি না করে কিছুটা দূরে ওভারব্রিজ তৈরি করায় পথচারীদের আগ্রহ কম।
বিএল কলেজের সামনে খুলনা-যশোর মহাসড়ক খুবই ব্যস্ততম। কলেজ গেটের কাছে প্রায়ই যানজট সৃষ্টি হয়। তারপরও লোকজন সরাসরি সড়ক পারাপার হয়। সরাসরি সড়ক পার হওয়ার পর জুনায়েদ শেখ ও মাসুম বিল্লাহ বলেন, সরাসরি পার হতে ১ মিনিটও সময় লাগে না। ফুট ওভারব্রিজ পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে পার হতে ৭-৮ মিনিট সময় লাগে। সে কারণে ঝুঁকি জেনেও সরাসরি পার হলাম। ওভারব্রিজটি বিএল কলেজ গেটের ঠিক সোজা করলে এবং সড়কের মাঝে উঁচু ডিভাইডার
থাকলে তখন সবাই ব্রিজই ব্যবহার করত বলে মন্তব্য করেন তারা।
এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে লোকজন ওভারব্রিজ দুটির ছবি দিয়ে তা তেমন কোনো কাজে আসছে না বলে মন্তব্য করছেন। তাদের ভাষায়, এ টাকা দিয়ে অন্য কোনো উন্নয়নকাজ করলে ভালো হতো।
বিষয়টি নিয়ে বিব্রত খোদ নির্মাণকারী সংস্থা সড়ক ও জনপথ বিভাগও। সংস্থাটির খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের জায়গা নির্ধারণে কোনো ত্রুটি ছিল না। কারণ কোনো প্রতিষ্ঠানের গেটের মুখেই এটি নির্মাণ করা যায় না। লোকজন অলসতা করে ওভারব্রিজে ওঠে না। অথচ সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়ানোর জন্য এ দুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এগুলো ব্যবহারে লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আপাতত আর নতুন কোনো ওভারব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা নেই সংস্থাটির।