December 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, December 2nd, 2024, 8:40 pm

লেনদেনে আস্থা ফেরাতে দুর্বল ব্যাংকগুলো যে পদক্ষেপ নিল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এটিএম বুথ, অনলাইন লেনদেন আবার সচল করেছে সংকটে পড়া কয়েকটি ব্যাংক। কাউন্টার থেকে আগের চেয়ে বেশি টাকা দেওয়া হচ্ছে। ইতিবাচক বার্তা দিতে কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাহককে বাড়ি থেকে ডেকে এনে টাকা দিচ্ছে। এভাবে লেনদেনের মাধ্যমে আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছে দুর্বল ব্যাংকগুলো। এর সুফল পেতে শুরু করেছে কোনো কোনো ব্যাংক। তবে পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। কয়েকটি ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংক সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে। এরই মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এক্সিম ব্যাংককে ৫ হাজার কোটি, সোশ্যাল ইসলামীকে ৪ হাজার কোটি ও ন্যাশনাল ব্যাংককে ৪ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সোমবার ২ হাজার কোটি টাকা করে পাবে। ১০ শতাংশ সুদে অর্থ পাচ্ছে এসব ব্যাংক। এর মধ্যে এক্সিম ছাড়া বাকি ব্যাংকগুলো বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এগুলোসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণের নামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ বের করে নেওয়া হয়।

ন্যাশনাল ব্যাংকের পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আগের গভর্নর পুরো ব্যাংক খাতকে এক ধরনের আস্থাহীনতায় ফেলে দিয়ে গেছেন। গত বছরের শেষ দিকে লাল, হলুদ তালিকা করার পর থেকে আমানতকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন তারল্য সহায়তা দিচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কিছুটা সময় লাগবে। আশা করা যায়, ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো ব্যাংকেও যদি সব আমানতকারী একবারে টাকা তুলতে যায় দিতে পারবে না।

ব্যাংকাররা জানান, আমানতকারীদের অনেকেই মনে করছিলেন এসব ব্যাংক আর টাকা দিতে পারবে না। এ কারণে প্রয়োজন ছাড়াও অনেকেই টাকা তুলতে আসছিলেন। অনেকেই মেয়াদপূর্তির আগেই আমানত ভাঙিয়ে ফেলেছেন। তুলতে না পারলেও তারা এফডিআর ভাঙাচ্ছিলেন। তবে এখন আমানতকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের পক্ষ থেকে সব আমানতকারীর পাশে থাকার কঠোর বার্তা দেওয়ার পর পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, গত কয়েক দিন ধরে তাদের সব ধরনের লেনদেন সচল করা হয়েছে। এটিএম বুথ, বিইএফটিএন, আরটিজিএসসহ সব ধরনের সেবা চালু হয়েছে। সব ধরনের বিল কালেকশন করা হচ্ছে। এতে আগের মতো আর চেক নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ার অবস্থা নেই। তিনি বলেন, লেনদেনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। শিগগির আর কোনো সীমা থাকবে না।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুস সায়াদাত বলেন, তাদের অনলাইন ব্যাংকিংসহ সব ধরনের সেবা চালু। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি আদায় এবং নতুন আমানত সংগ্রহে জোর দেওয়া হয়েছে। আস্থা ফেরানোই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। ইতিবাচক বিষয় হলো– রোববার তাদের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে যে পরিমাণ টাকা উত্তোলন হয়েছে, জমা হয়েছে তার চেয়ে বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহে চারটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা দিলেও ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এখনও টাকা পায়নি। আজ রোববার সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় ব্যাংক দুটিকে আজ ২ হাজার কোটি টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফরীদ উদ্দীন আহমদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য সহায়তার টাকা দু-এক দিনের মধ্যে তাদের অ্যাকাউন্টে জমা হবে। এরপর লেনদেন আরও স্বাভাবিক হবে বলে তাদের আশা। তবে এখন পর্যন্ত তাদের ব্যাংক বড় ধরনের কোনো ঝামেলায় পড়েনি। দরজা বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে নতুন করে আর টাকা না ছাপানোর ঘোষণা দিয়েছিল। তবে ব্যাপকভাবে যেন আস্থাহীনতা তৈরি না হয় সেজন্য ডিপি নোটের বিপরীতে এসব ব্যাংকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরাসরি টাকা ইস্যুর বিষয়টি ‘মানি প্রিন্টিং’ বা ‘টাকা ছাপানো’র মতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে নির্ধারিত পরিমাণের টাকা স্থানান্তর করেছে। এখন সমপরিমাণ টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিতে পারবে। প্রয়োজনে অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি টাকা দিলে মূল্যস্ফীতিতে এর প্রভাব পড়ে। তবে ব্যাপক মাত্রায় যেন প্রভাব না পড়ে সে জন্য একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে।