April 22, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 19th, 2025, 11:36 pm

কমলগঞ্জে আধুনিক চাষাবাদের বিস্তারে হারিয়ে যাচ্ছে আখ চাষ

কমলগঞ্জ উপজেলা নোয়াগাঁও গ্রামের আখ চাষী মনসুর আলীর আখের জমিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আখ মাড়াইয়ের কাজে।

 

পারভেজ আহমদ, কমলগঞ্জ ( মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:

আধুনিক চাষাবাদের বিস্তারে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ জনপদের একসময়ের জনপ্রিয় কৃষি আখ চাষ। ১০-১৫ বছর আগেও আখ চাষের বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। শীতের সকালে গ্রামে গ্রামে ঘুরে আখের রস বিক্রি করতেন রস ফেরিওয়ালারা। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও আখের রস খাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠতেন। এসব যেন এখন শুধুই স্মৃতি। কালের বিবর্তনে তা যেন এখন হারিয়ে যেতে বসেছে।

একসময় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় প্রচুর আখ চাষ হতো। নদীর চড়, হাওড় ও সমতল ভূমিতে প্রচুর আখ চাষ করতেন এখানকার কৃষকরা। গ্রামে গ্রামে গরু-মহিষ দিয়ে চড়কির মাধ্যমে আখের রস সংগ্রহ করা হতো। আধুনিক চাষাবাদের বিস্তারে কৃষকরা সহজলভ্য ফসল উৎপাদনে মনোনিবেশ করেছেন। এতে আখ চাষের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকালে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে দেখা মিলে মেশিন দিয়ে আখের রস সংগ্রহের দৃশ্য। গ্রামীণ জনপদের একসময়ের জনপ্রিয় কৃষি আখ চাষ এখনও ধরে রেখেছেন কৃষক মনসুর আলী। তিনি ট্রাটকারের মাধ্যমে মেশিন দিয়ে আখ থেকে রস সংগ্রহ করে তা আগুনে জ্বাল দিয়ে লালী ও গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন।

উপজেলার ভানুগাছ বাজার থেকে রস, লালী, গুড় নিতে আসা আহমেদুজ্জামান আলম ও জাহেদ আহমদ জানান, এই রস লালী, গুড় এগুলো এখন আর গ্রামে নিয়ে কেউ যায় না। এগুলো এখন বিলুপ্তের পথে। আমরা সাধারণত বাজারগুলো থেকে গুড় কিনে খাই। আসলে সেটা কতটুকু স্বাস্থের জন্য ভালো তা জানি না।

তারা আরো বলেন, আমরা ফেসবুকে দেখতে পাই, এ এলাকায় এই ধরনের চাষ ও বিক্রি হচ্ছে। তাই ১৩ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে এসে রস, লালী ও গুড় নিতে আসলাম। তারা আমাদের কাছ থেকে রসের দাম রাখল কেজিপ্রতি ৬০ টাকা, লালী কেজিপ্রতি ১৫০-১৮০ টাকা ও গুড় ১৮০ টাকা। আসলে দাম কেমন তা দেখে কিনতে আসা হয়নি আমাদের। মূলত এগুলো একদম ফ্রেশ তাই পরিবারের জন্য নিয়ে যাচ্ছি। এখন প্রচুর শীত। তাই বাসা থেকে পরিবারের সদস্যরা বলেছে বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানিয়ে খাবে। তাই নিতে হচ্ছে।

আলাপকালে আখ চাষী কৃষক মনসুর আলী বলেন, ‌‘গত ৫-৬ বছর ধরে আখ চাষ করে আসছি। সাড়ে দুই কিয়ার (৬০) শতক জায়গায় আমি নিজে এই আখ ক্ষেতের চাষ করি। ৮মাসে এই আখ  মাড়াই করে বিক্রির উপযোগি হয়। আমার খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। খরচের টাকার পরেও ১ লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ আয় হবে।’

তিনি আরো জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন আসছেন আমার এই কৃষি ক্ষেতে আখ মাড়াই করে রস, লালী ও গুড় তৈরি করা দেখতে ও নিয়ে যেতো। আমি রস ৬০ টাকা, লালী ১৫০-১৮০টাকা গুড় ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছি।’