January 24, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, January 20th, 2025, 3:17 pm

অপরিচিতদের সালাম না দেওয়া কিয়ামতের আলামত

অনলাইন ডেস্ক:
সালাম শান্তির প্রতীক। মুমিনের পাপমোচন ও সওয়াব লাভের মাধ্যম। মিরাজের রজনীতে মহান আল্লাহ রাসুল (সা.)-কে যেসব বস্তু বা বিষয় উপহার দিয়েছেন, এর মধ্যে সালাম অন্যতম। তিনি বলেছেন, ‘আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’।

সালামের মাধ্যমে শান্তির বার্তা দিয়ে অপর ভাইকে অভিবাদন জানানো জান্নাতিদের কাজ। ইসলাম ধর্মে এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রিয় নবী (সা.) এই কাজটিকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মুমিনরা জান্নাতে যাওয়ার সময় ফেরেশতারা তাদের সালামের মাধ্যমে অভিবাদন জানাবেন।

বলবেন, ‘তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখী হও।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৭৩)

এরপর জান্নাতেও সালামের প্রচলন থাকবে। “সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।” (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১০)

এরপর জান্নাতে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন জান্নাতিদের সালাম দেবেন।

‘সালাম, পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সম্ভাষণ।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৫৮)

সালাম এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের সদ্ব্যবহারের অন্যতম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের ছয়টি সদ্ব্যবহারের বিষয় রয়েছে : তার মধ্যে অন্যতম হলো, কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে সালাম করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৩৬)

আমাদের সমাজে সালামের প্রচলন থাকলেও আমরা অনেক সময় অপরিচিত ব্যক্তিদের সালাম দিই না। কিংবা পরিচিতদের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু লোকের বাইরে অন্যদের সালাম দিই না।

অথচ সালামের বিধান এমনটা নয়। শুধু কিছু বিশেষ লোককে নির্দিষ্ট করে সালাম দেওয়া এবং অন্যদের না দেওয়া কিয়ামতের আলামত। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, তারিক ইবনে শিহাব (রহ.) বলেন, আমরা আবদুল্লাহ (রা.)-এর কাছে বসা ছিলাম। এ অবস্থায় তার সংবাদ বাহক এসে বলল, নামাজের জামাত শুরু হয়ে গেছে। অতএব, তিনিও উঠলেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে উঠে মসজিদে প্রবেশ করলাম। তিনি লোকদের মসজিদে সম্মুখভাগে রুকু অবস্থায় দেখলেন। তিনি তাকবির (তাহরিমা) বলে রুকু করলেন। আমরাও সামনে অগ্রসর হয়ে তাঁর অনুরূপ করলাম। এক ব্যক্তি দ্রুতবেগে যেতে যেতে বলল, হে আবদুর রহমানের পিতা! আসসালামু আলাইকুম।

তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন এবং তাঁর রাসুল (সা.) পূর্ণরূপে পৌঁছে দিয়েছেন। আমরা নামাজ শেষ করলে তিনি ফিরে গিয়ে তাঁর অন্দরমহলে চলে গেলেন এবং আমরা তাঁর (ফিরে আসার) অপেক্ষায় স্বস্থানে বসে থাকলাম। শেষে তিনি বের হয়ে এলেন। আমাদের কতক কতককে বলল, তোমাদের কে তাঁকে জিজ্ঞেস করবে? তারিক (রহ.) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করব। অতএব, তিনি জিজ্ঞেস করলে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের নিকটবর্তী কালে লোক বিশেষকে নির্দিষ্ট করে সালাম দেওয়ার প্রচলন হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, ফলে স্বামীর ব্যবসায়ে স্ত্রীও সহযোগিতা করবে। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটবে, মিথ্যা সাক্ষ্যদানের প্রচলন হবে এবং সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হবে।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১০৫৯)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের আলামতগুলোর একটি হলো, মানুষ কেবল পরিচিত মানুষদেরই সালাম করবে।

(মুসনদে আহমদ, হাদিস : ৩৮৪৮)

অথচ নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করল যে কোন ইসলাম উত্তম? রাসুল (সা.) বলেন, তুমি লোকদের পানাহার করাবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৫)

এমনকি কারো সঙ্গে দেখা হলে তার সালাম পাওয়ার অপেক্ষা না করে আগে সালাম দেওয়ার মধ্যে বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

হজরত আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক উত্তম ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৭)

অর্থাৎ যে আগে সালাম দেবে সে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হবে। সে হিসেবে আমাদের সবারই উচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা। তদুপরি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে কার আগে সালাম দেওয়া উচিত। সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন প্রিয় নবী (সা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বয়ঃকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্পসংখ্যক অধিকসংখ্যককে সালাম দেবে। (বুখারি, হাদিস : ৬২৩১)

উপরোক্ত হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) তিন শ্রেণির মানুষের সালামের আদব শিক্ষা দিয়েছেন। বয়ঃকনিষ্ঠরা বয়োজ্যেষ্ঠদের অর্থাৎ ছোটরা বড়দের। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বোঝা যায়, বয়সে ছোটদের উচিত বয়সে বড়দের আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু বড়রাও চাইলে ছোটদের আগে সালাম করতে পারেন। কেননা সালাম আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। সুতরাং যে আগে সালাম দেবে, সে-ই আল্লাহর বেশি নিকটবর্তী হবে।