March 17, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, February 19th, 2025, 11:57 am

তিস্তার পানি আমাদের ন্যায্য অধিকার এটি অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকার বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে পারেনি- মেজর হাফিজ

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি: তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়সহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবীতে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির দুই দিনের কর্মসূচীর দ্বিতীয় (শেষ) দিনে গঙ্গাচড়ায় মহিপুর তিস্তা সেতুর নিচে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে অতিথির বক্তব্যে
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম বলেছেন, তিস্তার পানি আমাদের ন্যায্য অধিকার। এই অধিকারের কথাটি অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকার বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে পারেনি। তিস্তা নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে মানবাধিকার লংঘন করেছে ভারত। পানির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একমাত্র সঠিক ভূমিকা নিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ সালে গঙ্গা নদীর পানি যখন তারা একতরফাভাবে প্রত্যাহার করেছিলো, তখন তিনি জাতিসংঘে গঙ্গার পানি বাংলাদেশের দাবির কথা বলিষ্ঠভাবে উত্থাপন করেছিলেন। সে কারণে ভারত বাধ্য হয়েছে ১৯৭৭ সালে গঙ্গা নদীর পানি বন্টনে একটি চুক্তি করার জন্য।
তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর প্রত্যেকটি নাগরিক আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। আমরা গত ১৬টি বছর ভারতের অত্যাচারে আবদ্ধ ছিলাম। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এই দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে ভারতের বৃত্তে পরিণত করার চেষ্টা চালিয়েছে। তাদের রাজনৈতিক ও পররাষ্ট্রনীতি ছিল একেবারেই নতজানু।
ভারতের স্বার্থের জন্য বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতি তার কোন দৃষ্টি ছিল না। মেজর হাফিজ বলেন, তিস্তা নদী হিমালয় উৎপন্ন হয়ে সিকিম পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই যাত্রা পথে অসংখ্য বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত সরকার। পানি তো দেয় না তারপরেও তারা ঠাট্টা তামাশা করে আমাদের সঙ্গে। এই শুষ্ক মৌসুমে পানি ছিল না পানি আরো অনেক কম ছিল। যেদিন থেকে বিএনপি এই আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে, হঠাৎ করে তারা গজলডোবায় পানি ছেড়ে দিয়েছে। এখন কিঞ্চিৎ পানি বেশি দেখা যাচ্ছে যেটা এই সময়ে গত বছরগুলোতে ছিল না। এটি একটি নিষ্ঠুর রসিকতা। একে তো পানি দেয় না তারপর মাঝে মাঝে এরকম তামাশা করে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকে নদী আগ্রাসনের শিকার। ৫৪টি নদী ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে এর মধ্যে প্রায় ৩৫টি নদীতে তারা বাঁধ দিয়েছে জলবিদ্যুৎ নির্মাণ করেছে। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে পানি সম্পদে ন্যায্য ভাগাভাগির জন্য যৌথ নদী কমিশন তৈরি হয়। এই যৌথ নদী কমিশনের বছরে চারটি সবার হওয়ার কথা থাকলেও চার বছরেও কোনো সভা হয় না। মেজর হাফিজ বলেন, একটি চুক্তি আওয়ামী লীগের আমলে দাড় প্রান্তে গিয়েছিল কিন্তু মমতা ব্যানার্জি ধোয়া তুলে এই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। আমরা তো মমতা ব্যানার্জিকে চিনি না, আমরা চিনি ভারত সরকারকে, কেন্দ্রীয় মোদি সরকারকে।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, ভারতও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। দুটি দেশের মধ্যে চুক্তি হবে সেখানে প্রদেশ কি বলবে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। কিন্তু তাদের এটি একটি টালবাহনা। ভারত উজানের দেশ বলে ভাটির দেশকে পানি বঞ্চিত করে, আমাদের হাতেও তেমন কিছু যন্ত্র আছে যেটি ব্যবহার করলে ভারত আমাদের কথায় বাধ্য হবে। এটির জন্য দরকার একটি নির্বাচিত সরকার, আপনারা দোয়া করেন আল্লাহর রহমতে আগামী দিনের নির্বাচনে জনগণ যদি বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয় তাহলে আমরা প্রত্যেকটি টুলস ব্যবহার করব, ভারতকে আমাদের কথা শুনতে বাধ্য করবো ইনশাআল্লাহ। তিনি অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ডক্টর ইউনুস এদেশের কৃতি সন্তান। কিন্তু যেই টিম নিয়ে তিনি মাঠে নেমেছেন, তারা বাংলাদেশের সমস্যা সমাধান করতে পারবে না। এর জন্য দরকার নির্বাচিত সরকার। পরে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবস্থান কর্মসূচিতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।
তিস্তার ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে তিস্তার চরে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, তিস্তা নদীরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক ও রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের সদস্য ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাহফুজ-উন-নবী ডন, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির সহ-সমন্বয়ক ও গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান মাবু। উল্লেখ্য যে, তিস্তার পানি ন্যায্য হিস্যা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে তিস্তাবেষ্টিত ৫ টি জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নিলফামারীর ১১ টি পয়েন্ট ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারী দুদিনের (৪৮ ঘন্টা) কর্মসূচি দেয় তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলুর উদ্যোগে লালমনিরহাটের তিস্তা সেতু এলাকায় কর্মসূচির ১ম দিন ১৭ ফেব্রুয়ারী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আললগীর। এদিকে ওইদিন গঙ্গাচড়া মহিপুর তিস্তা সেতু এলাকায় বক্তব্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণসংহতির সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
দুদিনের কর্মসূচিতে মহিপুরে তিস্তা সেতুর দু-পার্শ্বে তিনটি বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়। তিস্তার পশ্চিম পাশে রংপুর মহানগর বিএনপি ও গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে একটি আর সেতুর পূর্ব পাশে লালমনিরহাট জেলার বিএনপি নেতা বাবলু ও জাহাঙ্গীরের উদ্যোগে দুটি আলাদা বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়। লক্ষীটারী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগেও কর্মসূচি পালন করা হয়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, তিস্তা পাড়ের হাজারো জনতা এবং বিভিন্ন এলাকার নানা পেশার মানুষজন এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করে। রাত্রি বেলায় সংগীতের পরিবেশনের দাবি তুলে ধরেন।