নিজস্ব প্রতিবেদক
ভঙ্গুর অর্থনীতির চাপে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেছেন, সরকারের বাড়তি ব্যয়ের প্রভাব সরাসরি জনগণের ওপর পড়ছে। রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টস এন্ড বিজনেসমেন ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (IBDWF)** আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
যাকাত ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্বারোপ:
ড. মজিদ বলেন, “যদি সঠিকভাবে যাকাত ব্যবস্থা পরিচালিত হয়, তাহলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক সুবিধা পাবে। সরকারকে উচিত সবাইকে সঠিকভাবে যাকাত প্রদানে উৎসাহিত করা।” একই সঙ্গে তিনি সকলকে বাড়তি ব্যয় কমিয়ে অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষার আহ্বান জানান।
দ্রব্যমূল্য ও শিল্প খাত উন্নয়নের সুপারিশ:
সেমিনারে বক্তারা বলেন, **দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, শিল্প খাতের উন্নয়নই অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র উপায় বলে মত দেন তারা। ব্যবসায়ীদের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়—
– অতিরিক্ত কর ও ভ্যাটের চাপ
– ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার
– আমদানি প্রক্রিয়ার জটিলতা
– কাস্টমস বিভাগে দুর্নীতি
– বিদ্যুৎ ও জ্বালানির উচ্চ মূল্য
**IBDWF এর সভাপতি মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন:** এফবিসিসিআই-এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট** আবুল কাশেম হায়দার, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, এনবিআরের সাবেক সদস্য পারসা বেগম ও নাসির উদ্দিন।
বারভিডার চেয়ারম্যান ও হকস্ বে অটো মোবাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হক , বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি মো. মফিজুর রহমান, আইবিডব্লিউএফ-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. আনোয়ারুল আজিম
প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক সংস্কার ও দাবিসমূহ:
বক্তারা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে নীতিগত সংস্কারের দাবি জানান। তাদের মূল দাবিগুলো হলো:
1. কর ও ভ্যাট নীতি সংস্কার:
– ব্যবসায়ীদের উপর অতিরিক্ত কর ও ভ্যাটের বোঝা কমাতে হবে।
– আমদানি পর্যায়ে অ্যাডভান্স ট্যাক্স ও ভ্যাট বাতিল করতে হবে।
2. ব্যাংকিং খাতের সংস্কার:
– ঋণের সুদহার সহনীয় করতে হবে।
– ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দিতে হবে।
3. বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম কমানো:
– শিল্প খাতের জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সহনীয় করতে হবে।
4. রপ্তানি ও আমদানির ভারসাম্য আনা:
– আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাস্টমস মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
– দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট ও ট্যাক্স হ্রাস করতে হবে।
খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদারের আহ্বান
বক্তারা কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সিন্ডিকেট ব্যবস্থা বন্ধ করতে হবে এবং কৃষি উপকরণের উপর কর হ্রাস করতে হবে।
এছাড়াও, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
শিল্প খাতের বিকাশ, কর ব্যবস্থার সংস্কার, এবং ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতাই অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করেন বক্তারা। সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, আসন্ন বাজেটে এই সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি ব্যালান্সড ও জনবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হোক।
আরও পড়ুন
ফেব্রুয়ারির প্রথম ২২ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৯২ কোটি ডলার
স্কুল ব্যাংকিংয়ে বেড়েছে আমানত
খাদের কিনারে থাকা অর্থনীতিকে টেনে তুলছে সরকার