March 4, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 4th, 2025, 3:19 pm

বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছি: প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও আন্তোনিও হারমান বেঞ্জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা ও বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

সোমবার (৩ মার্চ) রাজধানীর একটি হোটেলে সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত ‘আপহোল্ডিং এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস: দ্য রুল অব জাজেজ ফর এ সাসটেইনেবল ফিউচার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা কেবল পরিবেশগত সংকটের দর্শক নই বরং আমরা ন্যায়বিচারের প্রহরী, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে এমন এক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যা পরিবেশ রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত, কিন্তু বর্তমানে পরিবেশগত ঝুঁকির মুখোমুখি। জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, শিল্পদূষণ এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ আমাদের জন্য বড় হুমকি। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ দেশের পরিবেশ সংরক্ষণের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নদী সুরক্ষা, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আদালত অনেক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছেন, যা আমাদের প্রতিশ্রুতির সাক্ষ্য বহন করে।
সুন্দরবনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবন, যা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বিরল ইরাবতী ডলফিনসহ অসংখ্য প্রাণীর আবাসস্থল। সুন্দরবন আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জন্য প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে, যা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করে। এটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততার বৃদ্ধি, শিল্পের প্রসার ও নির্বিচার বন উজাড় সুন্দরবনকে সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। যদি আমরা এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিই, তবে অমূল্য এই সম্পদ হারিয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব। সুতরাং, কঠোর আইনি কাঠামো, টেকসই নীতিমালা ও সক্রিয় বিচারিক তদারকি নিশ্চিত করতে হবে।

বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছি: প্রধান বিচারপতি
ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, আমাদের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ মূলত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করা হয়, যা বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসন সংকুচিত করে এবং পৃথক ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করে। আমি এই প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসন পুনরুদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছি। আমার প্রচেষ্টা হলো বিচার ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
বিচার বিভাগের সংস্কার ও পরিবেশগত ন্যায়বিচার একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগ শুধু আইন ব্যাখ্যা করবে না বরং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য দৃঢ় অবস্থান নেবে। আসুন, আমরা একসঙ্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই যে, বিচার বিভাগ শুধু প্রতিশোধমূলক কিংবা শাস্তি আরোপের জন্য নয়, বরং পরিবেশ পুনরুদ্ধারেও নেতৃত্ব দেবে।

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা রাখেন ব্রাজিলের ন্যাশনাল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আন্তোনিও হারমান বেঞ্জামিন। পরিবেশ আইন বিশেষজ্ঞ এই বিচারপতি তার বক্তব্যে বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু ন্যায়বিচারে ব্রাজিলের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ সময় ব্রাজিলের বিচারপতি বেঞ্জামিন পরিবেশ সংরক্ষণে বাংলাদেশের সক্রিয় অবস্থানকে সাধুবাদ জানান এবং আইনি ও নীতিগত বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ্ মাহবুব। তিনি পরিবেশ রক্ষায় জনস্বার্থ মামলার নজীর তুলে ধরার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে বিচারকরা যে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে পারেন সে বিষয়টি আলোকপাত করেন।
সেমিনারে অ্যাটর্নি জেনারেল মো আসাদুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস উপস্থিত ছিলেন।