লাইফস্টাইল ডেস্ক:
সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে একগ্লাস ঠান্ডা সরবত পান করতে কার না ভালো লাগে। আমাদের দেশে সাধারণত চিনি ও লেবু দিয়ে বানানো হয় সরবত। এছাড়া অনেকে ইফতারের পরই দোকান থেকে নিয়ে নেন এক বোতল ঠান্ডা সফট্ ড্রিংক বা এনার্জি ড্রিংক।
কিন্তু খালি পেটে চিনির সরবত বা অন্য চিনিযুক্ত পানীয় পান করার পর সাময়িকভাবে এনার্জি ফিরে পাওয়ার অনুভূতি হলেও তা শরীরের জন্য কতোখানি উপকারী? এই পানীয়গুলি পান করার পর আমাদের দেহে আসলে কী ঘটে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে মানবদেহের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো বুঝতে হবে। জেনে নিন এ বিষয়ে গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞরা কী বলে-
১. রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি
মিষ্টি পানীয়তে থাকা উচ্চ মাত্রার চিনি (সুক্রোজ বা ফ্রুক্টোজ) রক্তে খুব দ্রুত শোষিত হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। ইনসুলিনের কাজ হলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা এবং কোষে গ্লুকোজ প্রবেশে সাহায্য করা। অতিরিক্ত ইনসুলিনের প্রভাবে আবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমে যায়, যা কখনও কখনও হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে যাওয়া) এর কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি পেতে পারে। আর ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য চিনির সরবত আরো বেশি সমস্যা, কেননা ইনসুলিনের মাত্রা শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা থাকেনা তাদের শরীরে। ফলে রক্তে শর্করা একবার অতিরিক্ত বেড়ে যায়, আবার অনেক বেশি নেমে যায়। এতে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর চাপ পড়ে।
২. মেটাবলিক সিনড্রোম এবং শারীরিক স্থূলতার ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত মিষ্টি পানীয় পান করলে মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ে। মেটাবলিক সিনড্রোম হলো একগুচ্ছ শারীরিক অবস্থা, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার উচ্চ মাত্রা, অতিরিক্ত চর্বি এবং অস্বাভাবিক কোলেস্টেরল, যা হৃদরোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত চিনিযুক্ত পানীয় পান করেন তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ২৬% বেশি।
৩. লিভারের চর্বি জমা হওয়া
মিষ্টি পানীয়তে থাকা ফ্রুক্টোজ লিভারে চর্বি জমার একটি প্রধান কারণ। গবেষণা অনুসারে, অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ লিভারে মেটাবলাইজড হয় এবং ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়। এই অবস্থা লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিসের কারণ হতে পারে।
৪. মস্তিষ্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব
চিনিযুক্ত পানীয় মস্তিষ্কের ডোপামিন সিস্টেমকে সক্রিয় করে, যা আনন্দের অনুভূতি দেয়। এই প্রক্রিয়াটি চিনিযুক্ত পানীয়ের প্রতি আসক্তি তৈরি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এ জাতীয় পানীয় মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্মৃতিশক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে।
৫. দাঁতের ক্ষয়ের কারণ
অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয় দাঁতের এনামেল ক্ষয়ের কারণ হতে পারে। গবেষণা অনুসারে, চিনি এবং অম্লীয় উপাদান দাঁতের ক্ষয় এবং ক্যাভিটি তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে মিষ্টি পানীয় পান করার পর দাঁত ব্রাশ করা বা পানি দিয়ে কুলি করা উচিত।
মিষ্টি পানীয় পান করার পর আমাদের দেহে যে শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনগুলো ঘটে তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে। তাই, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য মিষ্টি পানীয়ের পরিবর্তে প্রাকৃতিক এবং পুষ্টিকর বিকল্প বেছে নিন। সরবতে চিনির বদলে গুড় ব্যবহার করুন, ও এনার্জি ড্রিংক বা সফট্ ড্রিংক পরিহার করুন।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে ‘প্রতিশোধের চক্র’ থেকে বের হওয়ার আহ্বান তুর্কের
স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি
৪০ বছর বঞ্চিত ইবতেদায়ি শিক্ষকরা, অবশেষে খুলছে ভাগ্য