March 6, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, March 6th, 2025, 4:07 pm

৪০ বছর বঞ্চিত ইবতেদায়ি শিক্ষকরা, অবশেষে খুলছে ভাগ্য

সংগৃহীত ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির প্রস্তাবের ফাইলে নিজের শেষ কর্মদিবসে স্বাক্ষর করে গেছেন বিদায়ি শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এখন প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পেলেই এই শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হবেন। এর ফলে দীর্ঘ ৪০ বছর পর এক হাজার ৫১৯ ইবতেদায়ি মাদরাসার ছয় হাজারের বেশি শিক্ষকের ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিদায়ি শিক্ষা উপদেষ্টা এমপিওভুক্ত (বেসরকারি) শিক্ষকদের জন্যও সুখবর দিয়ে গেছেন। শিক্ষকদের উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা, বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে বিদায় এবং নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা জানান।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েই দুপুর ১২টায় সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে আসেন নতুন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

বিদায়ি উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমি সবাইকে আশ্বাস দিয়েছিলাম, সাধ্যমতো এ বছর এবং আগামী বছরের বাজেটে যতটুকু অর্থ সংকুলন করা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আমরা যত দূর পারি চেষ্টা করব দাবিগুলো মেটাতে।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘কিন্তু ১৫-২০ বছরের বঞ্চনা দু-এক বছরের বাজেট দিয়ে তো মেটানো যায় না এটা বোঝানো খুব কঠিন। আজই বেসরকারি বেতন সরকারি বেতনের সমান করে দিতে হবে— এটা ন্যায্য দাবি বুঝলাম, কিন্তু এক বছরের বাজেট দিয়ে কিভাবে ১৫ বছরের বৈষম্য ঠিক করা যায়? কিন্তু শুরুটা করা দরকার। সেই শুরুটা আমরা করে দিয়ে যাচ্ছি।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘তাঁদের (এমপিওভুক্ত শিক্ষক) উৎসব ভাতা, বিনোদন ভাতা, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা—এ বছরের ঈদুল আজহা থেকে শুরু করে আগামী বছরের বাজেট থেকে অন্তত কিছু বাড়াতে পারব, এখানেও আমি ঘোষণা দিচ্ছি না কত বাড়াব। আমি জানি সেটুকু বাজেটের মধ্যে এ বছর এবং আগামী বছরের বাজেটের মধ্যে প্রভিশন রাখা হচ্ছে।

শিক্ষকদের অবসর এবং কল্যাণ ভাতার জন্য একটা তহবিল তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে বিদায়ি উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বছরই কিছুটা তৈরি করা হয়েছে। আগামী বাজেটে আরো রাখা হবে। তবে পুরো ফান্ড টেকসই করতে হলে দু-একটা বাজেটে হবে না, ভবিষ্যতে তিন-চারটা বাজেটে আশা করি এটার সমাধান হয়ে যাবে।’ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কল্যাণ ভাতা এবং অবসর ভাতা—এটা হলো তাঁদের সবচেয়ে ন্যায্য দাবি। কিন্তু তাঁরা তো সংঘবদ্ধ নন। তাঁরা রাস্তায়ও কোনো দিন নামেননি। কিন্তু আমি তো মনে করেছিলাম তাঁদের ওই দাবিটাই সবচেয়ে আগে মেটানো উচিত।’

ইবতেদায়ি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ফাইলে সই করলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

গতকাল বিদায়ি বক্তব্যে বিষয়টির ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, একই কারিকুলামে পড়াশোনা করিয়ে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের চরম বৈষম্য ছিল। সেই বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘দেশের অনেক ইবতেদায়ি মাদরাসা আছে। এর মধ্যে অনেক অনানুষ্ঠানিক। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানের নথি (রেজিস্ট্রেশন) আছে। সরকারি প্রাথমিক স্কুলের মতো তারা বাংলা, ইংরেজি গণিত পড়াচ্ছে, অবকাঠোমো শিক্ষক থাকার পরও এমপিওভুক্ত করা হয়নি। তাঁদের এমপিওভুক্ত করা সম্ভব। সেই কাজ আমি করে দিয়েছি।’

মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস থেকে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার জন্য কাজ করছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগ। সারা দেশে এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শনাক্তকারী নম্বর আছে (ইআইআইএন) এমন এক হাজার ৫১৯টি মাদরাসাকে এমপিও করার ফাইল প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে।

গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শেষ দিন সেই ফাইলে স্বাক্ষর করে গেছেন বিদায়ি শিক্ষা উপদেষ্টা। সেই ফাইল এখন প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে। তাঁর সম্মতি মিললে শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি হিসেবে বেতন-ভাতা পাবেন। জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, বিদায়ি উপদেষ্টা এই ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন। ফাইলটি এখন প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের অনুমতির জন্য পাঠানো হবে। তিনি সদয় অনুমতি দিলে খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হবে।

কত দিন লাগবে পারে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি বছরের বাজেট বরাদ্দ থেকে অর্থ ছাড়ের আশ্বাস দিয়েছেন। মে মাসের বেতন যেন শিক্ষকরা পান সেই চেষ্টা চালাচ্ছি।’ বিদায়ি বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রায় একই কারিকুলামে পাঠদান করা হয়। কিন্তু সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা শতভাগ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলেও ইবতেদায়ি শিক্ষকরা নামমাত্র তিন হাজার টাকার মতো অনুদান পান। এটা চরম বৈষম্য।

অথচ আলিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করা অনেক ছাত্র শুধু দেশে নয়, বিদেশেও শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন পেশায় সুনামের সঙ্গে চাকরি করছেন। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ শিক্ষা ও আলিয়া মাদরাসার মধ্যে পার্থক্য দেখি না। যেই বৈষম্য ছিল সেটি দূর করা হবে। এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে।’ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জট থাকায় একসঙ্গে সবাইকে এমপিওভুক্ত করা সম্ভব না। যেসব মাদরাসার নথি (রেজিস্ট্রেশন) আছে সেগুলো প্রথম ধাপে এমপিওভুক্ত করা হবে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে এমপিওভুক্ত করা হবে।