March 15, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, March 15th, 2025, 1:13 pm

বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ তৈরি হয়েছে মার্কিনদের

অনলাইন ডেস্ক:

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স ও কাতারের রাজপরিবারের ‘গ্লোবাল এনগেজমেন্ট অ্যাডভাইজার’ রিচার্ড এইচ গ্রিফিত বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা, স্টারলিংকের সেবা এবং স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: আমরা শুনছি বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালু হবে। এই সেবা চালুর বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থা কী?

রিচার্ড গ্রিফিত: আপনারা দেখেছেন, অধ্যাপক ইউনূস ও ইলন মাস্কের মধ্যে ফোনালাপ (১৪ ফেব্রুয়ারি) হয়েছে। ওই সময় বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা চালু করতে তাঁর সরকার সব সহায়তা দেবে। তিনি কর্মকর্তাদের একটি দল গঠন করে দিয়েছেন। তিনি যে কাজটি দ্রুত এগিয়ে নিতে চান, এটা তারই প্রমাণ। বাংলাদেশ সরকার বলছে, তারা ৯০ দিনের মধ্যেই সেবাটি চালু করতে চায়। হয়তো এর চেয়ে কিছু সময় বেশি লাগতে পারে। তারপরও যে সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, সেটা হবে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় উদ্যোগ নেওয়া ও বাস্তবায়নের সবচেয়ে দ্রুত সময়কাল।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে কী মডেলে স্টারলিংক চালু হতে পারে?

রিচার্ড গ্রিফিত: এ বিষয় ঠিক করবে স্টারলিংকের কারিগরি দল। এ রকম একটি দল বাংলাদেশে আসবে। তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সেরা মডেলটিই বাস্তবায়ন করবে।

প্রশ্ন: স্টারলিংক কি বাংলাদেশে খুব ভালো ব্যবসার সম্ভাবনা দেখছে?

রিচার্ড গ্রিফিত: অবশ্যই। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যেটি এখনো আমেরিকান ও ইউরোপীয়দের (বিনিয়োগকারী) রাডারে আসেনি। বাংলাদেশে এখন যে সরকারপ্রধান রয়েছেন, তিনি বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, আমি মনে করি, যা আগে ছিল না। এখন কিছু আমেরিকান কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসার আগ্রহ দেখাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কীভাবে সম্প্রসারিত হয়, তা দেখার জন্য আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে কি কোনো মোবাইল অপারেটরের সঙ্গে স্টারলিংক চুক্তি করবে?

রিচার্ড গ্রিফিত: সেটা একটা আলাদা বিষয়। আমি মনে করি, স্টারলিংককে প্রথমে সরকারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে হবে, যাতে লাইসেন্স ও তরঙ্গ বরাদ্দ পাওয়া যায়। সেগুলো পাওয়ার পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার বিষয়টি আসবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে প্রচলিত ইন্টারনেট সেবার চেয়ে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের মানুষ কেন স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করবে?

রিচার্ড গ্রিফিত: বাংলাদেশের সব মানুষ স্টারলিংক ব্যবহার করবে, সেটা আমরা মনে করি না। এটা মূলত কমিউনিটিভিত্তিক ব্যবহারের জন্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্টারলিংক সেবা দিতে পারবে। আমি আফ্রিকা অঞ্চল ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দেখেছি, স্টারলিংক মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মতো স্থাপনায় সম্মিলিতভাবে ব্যবহার করা হয়। সেটার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ উপকৃত হন।

প্রশ্ন: আমরা দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্রে স্টারলিংকের সেবার যে মূল্য, কেনিয়ায় তার চেয়ে কম। তার মানে দেশভেদে সেবামূল্যের পার্থক্য আছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কী হবে?

রিচার্ড গ্রিফিত: একেক দেশের জন্য একেক মডেল অনুযায়ী দাম ঠিক করা হয়। এটা আসলে ঠিক করবেন স্টারলিংকের প্রতিনিধিরা, যাঁরা এটা নিয়ে কাজ করেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ একটি বড় বাজার। এই বাজারে স্টারলিংকের সেবার নির্দিষ্ট দর থাকবে। এটা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ আইনে আইনানুগ আড়ি পাতার সুযোগ আছে। স্টারলিংক কি সেই সুযোগ দেবে?

রিচার্ড গ্রিফিত: দেখুন, আমি শুধু উচ্চপর্যায়ের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে পারি। কারিগরি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানবেন।

প্রশ্ন: আপনি বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় কোম্পানির প্রতিনিধি বাংলাদেশে ব্যবসার বিষয়ে আজ শনিবার আপনার সঙ্গে কথা বলতে আসবে। বাংলাদেশে কি আমেরিকান কোম্পানিগুলোর ব্যবসার আগ্রহ দেখছেন?

রিচার্ড গ্রিফিত: হ্যাঁ। নতুন করে এই আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আপনারা ভবিষ্যতে এটা আরও বেশি দেখতে পাবেন। আসলে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী নিজের সম্ভাবনা তুলে ধরেনি, কীভাবে তুলে ধরতে হয়, সেটা তাদের অজানা। বাংলাদেশকে আরও জোরালোভাবে বলতে হবে যে কেন এই দেশে ব্যবসা করতে আসা উচিত। আমি যখন বাংলাদেশের জনসংখ্যার কথা বলি, তখন তারা (বিনিয়োগকারী) আশ্চর্য হয়, আমি যখন বাংলাদেশের অর্থনীতির কথা তুলে ধরি, তারা আশ্চর্য হয়। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের কথা শুনলেও তারা চমকে ওঠে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের কোন কোন খাত বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে?

রিচার্ড গ্রিফিত: বাংলাদেশ থেকে যদি যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ নার্সদের পাঠানো হয়, সেটা ভালো হবে। বাংলাদেশের বিপুল জনশক্তি রয়েছে। জনসংখ্যার বড় অংশ তরুণ। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। তথ্যপ্রযুক্তি খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ পণ্য উৎপাদনেও ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ দেশের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস একটি বড় মুক্তবাণিজ্য এলাকা গড়ে তোলার কথা বলেছেন। এ ধরনের উদ্যোগ ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: ইলন মাস্ক কি বাংলাদেশে আসবেন?

রিচার্ড গ্রিফিত: বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস ও ইলন মাস্ক কথা বলেছেন। ইলন যদি বাংলাদেশে আসেন, সেটা একটা দারুণ বিষয় হবে।