March 19, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, March 19th, 2025, 1:18 pm

রংপুর অঞ্চলের আলু চাষিরা পড়েছেন বিপাকে

আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর : রংপুর অঞ্চলের চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ আলু চাষ হয়েছে । এতে  ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা। হিমাগারে যে সংরক্ষণ করে রাখবেন, সেখানেও বাগড়া। হিমাগারের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন মালিকরা।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর (২০২৪-২৫ মৌসুম) আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর। অথচ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে জেলায় এবার আলু আবাদ হয়েছে ৬৬ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। গত বছর ৫৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আলুর উৎপাদন হয়েছিল ১৫ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ লাখ মেট্রিক টন। তবে তা ২০ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। রংপুর ছাড়াও নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে এবার আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৩৯ হেক্টর।

কৃষকরা বলছেন, গতবছর এসময় যে আলু ২৫-৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, সেখানে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২-১৩ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে আলুর বাজার দ্রুত নেমে যাওয়ায় আলু চাষিরা লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
রংপুর সিটি করপোরেশনের ময়নাকুঠি এলাকার কৃষক বদরুল আলম জানান, এবার দুই বিঘা (স্থানীয়ভাবে ২৭ শতকে এক বিঘা) জমিতে ক্যারেজ জাতের আলু আবাদ করেছেন। জমি লিজ ও বীজের দামসহ আবাদে মোট খরচ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। বর্তমানে আলুর দাম খুবই কমতি। এজন্য সব আলু জমি থেকে উত্তোলন করেননি।
গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম জানান, জমি লিজ নিয়ে তিনি ২৭ শতক জমিতে আলু চাষ করেছেন। প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু আলু বিক্রি করে আশানুরূপ লাভ হয়নি। বাকি আলু উত্তোলন করলেও তেমন লাভ হবে না। হিমাগারে রাখবেন, তাতেও সমস্যা। কারণ এবার হিমাগারের ভাড়া বেড়েছে।

একইভাবে হতাশার কথা বললেন নগরীর চব্বিশ হাজারি এলাকার চাষি কৃষ্ণ চন্দ্র বর্মন। তিনি  বলেন, ‘এবার ফলন ভালো হয়েছে। তবে বর্তমানে যে দাম তাতে বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে। হিমাগারে রাখার সিদ্ধান্ত নিযেছি কিন্তু তাতেও বাগড়া। হিমাগারের ভাড়া বেড়েছে।’

পীরগাছা উপজেলার কান্দি এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে খরচ ৩৫-৪০ হাজার টাকা। উৎপাদন হয়েছে ৭০-৮০ মণ। বর্তমানে প্রতিমণ আলুর দাম ৪৮০-৫২০ টাকা। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। নিজস্ব জমিতে আলু চাষ করেছেন বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কৃষক রেফাজ উদ্দিন। এতে অন্যদের তুলনায় তার খরচ কিছুটা কম হয়েছে। তিনি বললেন, বাজারে এখন আলুর যে দাম তাতে আশানুরূপ লাভ হবে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিবছর রংপুর অঞ্চলে আলু চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত থাকে। উৎপাদিত আলু দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বাদে বিদেশেও রপ্তানি হয়।

তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগ সবসময় চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছে। তবে চাষিরা হিমাগারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আলু সংরক্ষণ করলে, এখন যে বাজারমূল্য তার চেয়ে বেশি দাম পাবেন বলে আশা করি।

এদিকে কোল্ডস্টোরেজ মালিকদের আলু বুকিং বন্ধের অন্যায় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি করেছে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের আহ্বায়ক আহসানুল আরেফিন তিতু ও সাধারণ সম্পাদক অজিত দাস । তারা কোল্ডষ্টোরে আলুর বুকিং বন্ধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে আলুচাষীদের জন্য কোল্ডষ্টোর খুলতে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন- ‘২/৩ মাস আগেও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ৭০/৮০ টাকায় জনগণকে আলু কিনে খেতে বাধ্য করেছে। আলুচাষীরা এবারে পর্যাপ্ত আলু চাষ করেছে। যা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। যা দেশের মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে। সকলের জানা উচিৎ আলুচাষীরা ঋণ করে সার, বীজ, কীটনাশক কিনে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে আলু চাষ করেছে। প্রতি কেজি আলুর উৎপাদনে খরচ পড়েছে প্রায় ২০ টাকা। কিন্তু সেই আলু লাভজনক দামে বিক্রি ও সংরক্ষণের জন্য সরকারের তরফে কোন কার্যকরী উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি। সরকারের এই অবহেলার সুযোগ নিয়ে কোল্ডষ্টোর মালিকরা রাতারাতি প্রতিকেজি আলুর ভাড়া দ্বিগুণ করে ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে। এর প্রতিবাদে আলুচাষীরা রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ করলেও সরকার আলুচাষীদের পক্ষে দাঁড়ায়নি। ফলে কোল্ডষ্টোর মালিক ও ব্যবসায়ীরা মিলে আলুচাষীদেরকে সর্বশান্ত করার পরিকল্পনা করেছে। বাজারে আলু এখন ১০ টাকা কেজি। লোকসান কমাতে স্বাভাবিকভাবেই আলুচাষীরা কোল্ডষ্টোরে আলু রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু মালিকরা কোল্ডষ্টোরে আলুর বুকিং বন্ধের ব্যানার টাঙ্গিয়েছে। এখন যে আলু উঠছে তার প্রায় পুরোটাই বীজ করার উপযোগী। দামও স্বাভাবিকভাবে বেশি হওয়ার  কথা।কিন্তু  কোল্ডষ্টোর মালিক আলুচাষীদের আলু না নিয়ে ব্যবসায়ীদের আলু গভীর রাতে কোল্ডষ্টোরে ঢুকাচ্ছে।’

নেতৃবৃন্দ আলুচাষীদের রক্ষায় অবিলম্বে কোল্ডষ্টোর খুলে আলুচাষীদের আলু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাখার ব্যবস্থা করতে এবং নিম্নোক্ত দাবি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

দাবিসমূহ: বুকিং বন্ধের অন্যায় সিদ্ধান্ত বাতিল করে খোদ আলুচাষীদের কোল্ডস্টোরেজে আলু রাখার ব্যবস্থা করা। অবিলম্বে প্রতি কেজি আলুর ষ্টোর ভাড়া ১.৫০ টাকা করতে হবে। ধানের মত আলুরও সরকারি রেট ঘোষণা করে খোদ আলু চাষীদের কাছ থেকে আলু কিনে সংরক্ষণ এবং বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ আলুচাষীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।