April 16, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, April 15th, 2025, 6:56 pm

হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো খেয়াল করুন

লাইফস্টাইল ডেস্ক

গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহে ঘাম হওয়া ও শরীর একটু খারাপ লাগা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু শুধু গরম লাগার অনুভূতি বাড়তে বাড়তে কখন যে হিট স্ট্রোকে পরিণত হয় তা বুঝে উঠতে পারেন না অনেকেই। তাই হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো জানা খুব জরুরি, যেন সময় থাকতেই নিজেকে ও অন্যকে রক্ষা করতে পারেন।

হিট স্ট্রোক কেন হয়?

শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা হোমিওস্ট্যাসিস ব্যর্থ হলে হিট স্ট্রোক হয়। তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যেসব পরিস্থিতিতে ব্যর্থ হয় তার মধ্যে প্রধান হলো অত্যধিক গরম ও আর্দ্র পরিবেশে দীর্ঘক্ষণ থাকা ও শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা ঘাম বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় বের হতে না পারা। একে বলে ক্ল্যাসিকাল হিট স্ট্রোক। আবার রোদের প্রচণ্ড তাপে বাইরে যারা কাজ করেন বা মাথায় রোদ নিয়ে দীর্ঘ সময় জার্নি করেন, তারাও এই সময়ে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে থাকেন। একে এক্সারশনাল হিট স্ট্রোক বলে। উচ্চ তাপমাত্রায় অভ্যস্ত না হলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই দুই ধরনের হিট

স্ট্রোক বিভিন্ন কারণে হতে পারে-

১. শরীরের পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন: পর্যাপ্ত পানি না পান করলে ঘাম কম তৈরি হয়, ফলে শরীরের তাপ বের হতে বাধা পায়।

২. দীর্ঘক্ষণ কঠোর শারীরিক পরিশ্রম: গরমে অতিরিক্ত ব্যায়াম ও কায়িক শ্রম করলে বা সেনাবাহিনীর ট্রেনিংয়ের সময় হিট স্ট্রোক ঘটে অনেক সময়।

৩. বয়স ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা: শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।

৪. কিছু ওষুধ শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয়। তাই অতিরিক্ত গরমে কাজ করা আপনার প্রতিদিনের কাজ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৫. গরম পোশাক বা বদ্ধ পরিবেশ: অতিরিক্ত মোটা কাপড় পরা বা বদ্ধ স্থানে তাপ জমে হিট স্ট্রোক হতে পারে।

যেসব কারণে হিট স্ট্রোকের হতে পারে, সম্ভব হলে এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন। কিন্তু বাস্তবতার খাতিরে অনেক সময়ই এড়িয়ে চলা সম্ভব হয়না। তাই হিট স্ট্রোক হতে লাগলে আপনার শরীরে কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে, তা বিস্তারিত জেনে নিন। লক্ষণগুলো জানা থাকলে দ্রুততম সময়ে সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ

১. থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ১০৪ ফারেনহাইট অথবা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা। থার্মোমিটার না থাকলে ত্বক গরম, শুষ্ক ও লাল হয়ে যাওয়া দেখেও বোঝা যায়। ঘাম কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া।

২. মাথা ঘোরা অনুভব হওয়া বা ভারসাম্য হারানো।

৩. মাইগ্রেনের মতো তীব্র মাথাব্যথা।

৪. বিভ্রান্তি বা অসংলগ্ন কথা বলা। যেমন, সময়-স্থান ভুলে যাওয়া।

৫. খিচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

৬. হ্যালুসিনেশন হওয়া প্রলাপ বকা বা অদ্ভুত আচরণ করা।

৭. হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে। দ্রুত ও দুর্বল পালস।

৮. হাইপোটেনশন বা রক্তচাপ কমে যাওয়া।

৯. পেশীতে ব্যথা বা খিঁচুনি ।

১০. বমি বা ডায়রিয়া, কখনও কখনও রক্তপাত সহ।

১১. শ্বাস দ্রুত ও অগভীর হয়ে যাওয়া।

১২. চোখে ঝাপসা দেখা বা পেশী দুর্বল লাগা।

হিটস্ট্রোক অনেকসময় প্রাণঘাতী হতে পারে তাই এই লক্ষণগুলো খেয়াল করলে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমেই রোগীকে রোদ বা গরম পরিবেশ থেকে সরিয়ে তুলনামূলক শীতল কোনো ঘরে বা গাছের নিচে নিয়ে যান। আপনি যদি নিজের মধ্যেও লক্ষণগুলো খেয়াল করেন, তবে দ্রুত কোন শীতল স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করুন, সেই সঙ্গে সাহায্যের জন্য কাউকে জানান।

এরপর গলার টাই, চাপা জামা ও বেল্ট জাতীয় পোশাকের অংশ ঢিলা করে দিন। রোগীর আশেপাশে কাউকে ভিড় করতে দেবেন না। বাতাস চলাচল মুক্ত রাখুন। ভেজা টাওয়েল ঘাড়ে, মাথায় ও বগলে চেপে ধরুন। সম্ভব হলে মুখ ও মাথা ধোয়ার ব্যবস্থা করুন।
এসব প্রথমিক চিকিৎসা চলতে চলতেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। কেননা সাময়িক ভাবে এই পদ্ধতিগুলো রোগীকে রক্ষা করতে পারলেও শরীরের ভেতরের কোন ক্ষতি হয়ে থাকলে তা নির্ণয় করতে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই লাগবে। নিজে নিজে সুস্থতার সিদ্ধান্ত না নিয়ে চিকিৎসককে বুঝতে দিন। সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।