নিজস্ব প্রতিবেদক
হাতি হত্যা চলছেই। গত ছয় মাসে দেশে মারা পড়েছে ১৮টি হাতি, যার অধিকাশ মৃত্যুই অস্বাভাবিক। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশে এতো সংখ্যক হাতির মৃত্যু নজিরবিহীন। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশে হাতি সংখ্যা কমে ৩৮০টি থেকে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২৬৮টিতে। ২০১৬ সালের পর দেশে হাতি নিয়ে আর জরিপ হয়নি। শুধু বন্য হাতি নয়, ব্যক্তি পর্যায়ে পোষা হাতি সংখ্যাও জানে না বন বিভাগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, হাতি সুরক্ষার উদ্যোগ নেই, নেই দৃশ্যমান কার্যক্রম। অথচ হাতি সুরক্ষার নামে প্রকল্প এনে কোটি কোটি টাকা অর্থ লোপাট করতে মরিয়া বন বিভাগের একটি চক্র। এই চক্রের মূলে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম। তার উপদেষ্টা হিসেবে খ্যাত বন বিভাগের সাবেক বিতর্কিত কর্মকর্তা তপন কুমার দে। ইতিমধ্যে মোল্যা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। চলতি বছরের ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধীন জলদি রেঞ্জের মনুরমার ঝিরিতে একটি হাতিকে কুপিয়ে হত্যা করে নখ ও দাঁত কেটে নেয়া হয়। ২৮ মার্চ আরেকটি হাতির রহস্যজনক মৃত্যু হয়। বিগত কয়েক দশকে হাতির প্রতি এমন নৃশংসতা দেখেনি কেউ। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন্য হাতি নিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রকল্প বাগিয়ে আনতে মরিয়া হয়েছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম।
এই কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে হাতি হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে তার পছন্দের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনের ব্যানারে চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারে কর্মী সংগ্রহ শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে কমিটি গঠন কার্যক্রম। অথচ ওই সংগঠনটির হাতি সুরক্ষার পূর্ব অভিজ্ঞতা এমনকি প্রশিক্ষণ পর্যন্ত নেই। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২৮টি দলে প্রায় ১১২টি হাতি বন, পাহাড়ে বিচরণ করে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বন, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় সেভ দ্যা ন্যাচার, নেকম, ধরাসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন জোড়ালো ভূমিকায় আছে। অথচ মোল্যা রেজাউল করিমের মদদপুষ্ট ওই সংগঠনটি ব্যতীত অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সাথে বন কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক রাখা মানেই মোল্যার তোপের মুখে পড়া।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি বান্দরবান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমানকে লেখা এক চিঠিতে মোল্যা রেজাউল করিম উল্লেখ করেন, ‘সরকারি কর্মচারী হিসেবে পূর্বানুমোদন গ্রহণ ব্যতীত সেভ দ্যা ন্যাচার নামক সংস্থার সাথে সহযোগিতামূলক কার্যক্রম গ্রহণের আইনগত ভিত্তি আছে কি না। সেভ দ্যা ন্যাচার অব বাংলাদেশের সাথে রেঞ্জ কর্মকর্তার (জুয়েল চৌধুরী) সম্পর্ক কি।’ অথচ গত বছরের ২১ নভেম্বর কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের সভাকক্ষে বিধি বহির্ভূতভাবে মোল্যা রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে সরকারি অর্থায়নে তার পছন্দের ওই সংগঠনটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী (চলতি দায়িত্ব) এক অফিস আদেশ জারি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশে বিচরণরত বন্যহাতির যথাযথ সুরক্ষা, অবাধ চলাচল নিশ্চিতসহ বন্যহাতি সংক্রান্ত অপরাধ দমনের লক্ষ্যে হাতি সুরক্ষায় ৬টি বিশেষ দল ঘোষণা করা হলো। ৬টি দলের মধ্যে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল মিলে ৫টি দলের ৪০ জন বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারি রয়েছেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাতি সুরক্ষা দলের সদস্যরা জানান, বিগত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাতি সুরক্ষায় বিশেষ দল গঠন করা হলেও দলগুলোর দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই, নেই বরাদ্দ। পরিবহন ব্যবস্থাও নেই। মোল্যা রেজাউল করিম তার পছন্দের পরিবেশবাদী সংগঠন দিয়ে হাতি সুরক্ষায় প্রকল্পের কাজ করাতে সুরক্ষা দলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন
১৬ বছর জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপরে নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়েছে- অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান
আশুলিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে ফাঁকা গুলি, অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ১
সাভারে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত