April 24, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, April 24th, 2025, 2:53 pm

আবু হোরায়রাহ (রা.) ও এক রহস্যময় চোর

আবু হোরায়রা (রা.) ছিলেন নবিজির (সা.) একজন প্রিয় সাহাবি

ইসলাম ডেস্ক

আবু হোরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ফিতরার খাদ্যশস্য (যা দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য জমা করা হয়েছিল) পাহারায় নিযুক্ত করলেন। গভীর রাতে এক আগন্তুক এলো এবং খাদ্যশস্য ওঠাতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম ও বললাম, আমি তোমাকে রসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে নিয়ে যাব। সে বললো, আমি একজন অভাবী লোক। আমার অনেক পোষ্য। আমি নিদারুণ কষ্টে আছি। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

ভোরে আমি রাসুলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে গেলাম। তিনি আমাকে বললেন, হে আবু হোরায়রাহ! তোমার হাতে গত রাতে যে ব্যক্তি বন্দি হয়েছিল, তুমি তার কী করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! বন্দিটি তার নিদারুণ অভাব ও বহু পোষ্যের কথা বললো। তাই আমি তার ওপর দয়া করলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে।

আল্লাহর রসুলের বলার কারণে আমি নিশ্চিত ছিলাম অবশ্যই সে আবার আসবে। আমি তার অপেক্ষায় রইলাম। ঠিকই সে আবার এলো। দুই হাতের কোষ ভরে খাদ্যশস্য ওঠাতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম। বললাম, আমি তোমাকে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে নিয়ে যাবো। সে বলল, তুমি আমাকে এবারও ছেড়ে দাও। আমি বড্ড অভাবী মানুষ। আমার পোষ্যও অনেক। আমি আর আসব না। এবারও তার ওপর আমার দয়া হলো। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

ভোরে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, আবু হোরায়রাহ! তোমার বন্দির খবর কী? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! সে খুবই অভাবী। বহু পোষ্যের কথা বললো। তাই আমি তার প্রতি দয়া দেখিয়ে তাকে ছেড়ে দিলাম। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। আবারও যে আসবে।

আমি বুঝলাম, সে আবারও আসবে। তাই আমি তার অপেক্ষায় থেকে আবারও তাকে ধরে ফেললাম এবং বললাম, তোমাকে আমি আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে নিয়ে যাবোই। এটা তিনবারের শেষবার। তুমি ওয়াদা করেছিলে আর আসবে না। এরপরও তুমি এসেছ। সে বলল, এবারও যদি আমাকে ছেড়ে দাও আমি তোমাকে একটি শেখাব, যে আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তোমার উপকার করবেন। তুমি শোয়ার জন্য বিছানায় গেলে আয়াতুল কুরসি পড়বে, তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে তোমার জন্য একজন রক্ষী থাকবে, ভোর হওয়া পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান ঘেঁষতে পারবে না।

আমলের কথা বলায় এবারও তাকে আমি ছেড়ে দিলাম।

ভোরে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, তোমার বন্দীর কী হলো? আমি বললাম, সে বলল, সে আমাকে এমন আমল শেখাবে যা দ্বারা আল্লাহ আমার উপকার করবেন। নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এবার সে সত্য কথা বলেছে অথচ সে মিথ্যুক। তুমি কি জানো, তুমি এ তিন রাত কার সাথে কথা বলেছ? আমি বললাম, আমি জানি না, হে আল্লাহর রাসুল! রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সে ছিল একটা শয়তান। (সহিহ বুখারি)

অর্থ ও উচ্চারণসহ আয়াতুল কুরসি

اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

উচ্চারণ: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তাঅ খুযুহু সিনাতুঁও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাজি ইয়াশফাউ ইনদাহু ইল্লা বিইযনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল আলিয়্যুল আজিম।

অর্থ : আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না ও নিদ্রাও নয়। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে, সবকিছু তাঁরই। কে আছে এমন যে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তাঁদের সামনে কী আছে ও পিছনে কী আছে সবই তিনি জানেন এবং তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তারা তাঁর জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর কুরসি আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টিত করেছে এবং সেগুলো সংরক্ষণ করতে তাঁর কষ্ট হয় না। এবং তিনিই সর্বোচ্চ ও মহান।