May 2, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, May 1st, 2025, 5:24 pm

প্যারোল পেতে দীপু মনিকে যেতে হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই গণহত্যার মামলায় গ্রেফতার সাবেক মন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্যারোলে মুক্তির আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মন্ত্রণালয় প্যারোলে মুক্তির আবেদনে সাড়া না দিলে ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি দেখবেন বলেও জানিয়েছেন আদালত।

আসামি পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (৩০ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আদালতে প্যারোলের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবুল হাসান, অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট মাহমুদুর রহমান রুবেল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার।

আবেদনের শুনানিতে আইনজীবী সিফাত মাহমুদ বলেন, আমাদের মক্কেল সাবেক মন্ত্রী ড. দীপু মনির স্বামী তৌফিক নেওয়াজ রাজধানীর গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এজন্য স্বামীর পাশে থাকতে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেছিলেন তিনি।

তখন আদালত বলেন, আদালতে কেন এসেছেন। মন্ত্রণালয়ে যাননি কেন? জবাবে আইনজীবী জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ইনহেরেন্ট পাওয়ার আছে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার থাকলেও আদালতের আদেশের পর সেখানে আবেদন করতে চাই। তখন আদালত বলেন, দেখি প্রসিকিউটরের পক্ষ থেকে কী বলেন।

এ পর্যায়ে শুনানিতে প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার বলেন, এখানে আবেদন করার কোনো প্রয়োজন নেই। ওনারা প্যারোলের আবেদন করবেন ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে সেটা উল্লেখ আছে কে কিভাবে কোন পর্যায়ে প্যারোলে মুক্তি পাবে।

তখন আদালত বলেন, আমরা আদেশ দিতে চাই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র থাকুক।

শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, প্যারোল দেবে কিনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কারা কর্তৃপক্ষ দেখবে। এই আবেদন করে অযথা আদালতের সময় ক্ষেপণ করছে। এতে বিচার কাজ বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের ইনহেরেন্ট পাওয়ার আছে। সেটি থাকলেও দীপু মনিকে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আদেশ দিতে পারেন না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ইনহেরেন্ট পাওয়ারে জামিন মঞ্জুর করতে পারেন। তা না হলে আজকে ডা. দীপু মনিকে প্যারোলে মুক্তির আদেশ দেবেন পরবর্তীতে আরও এমন আত্মীয়-স্বজনের অসুস্থতার বিষয়ে শত শত প্যারোলে মুক্তির আবেদন নিয়ে আসবেন অন্যান্য আসামিরা।
এ পর্যায়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমরা এর আগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বড় ছেলে রাফিক বিন সাঈদী মারা যাওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে তার প্যারোলে মুক্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সেটি নাকচ করেছিলেন। পরে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করে সাঈদীর প্যারোলে মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলাম।

এরপরে আদালত ডা. দীপু মনির আইনজীবীকে জিজ্ঞেস করেন, আপনারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন? জবাবে আইনজীবী জানান, না করা হয়নি।

তখন প্যারোল আবেদন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যেতে বলেন ট্রাইব্যুনাল। আদালত বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করেন, যদি ব্যবস্থা না হয় তখন আমরা দেখবো।

এরপর দীপু মনির আবেদনের বিষয়ে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার সিফাত মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, আজকে ট্রাইব্যুনালে করেছিলাম যেন একটা আদেশ হলে আমরা আজকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারি। বৃহস্পতিবার রোগীর অপারেশন হওয়ার কথা রয়েছে। তিনদিন ছুটি এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা যায় কিনা। তাই আমরা আদালতে আবেদন করি। এখন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে চেষ্টা করবো অপারেশন পেছালে রোগীর কোনো সমস্যা হবে কিনা সেটা জানতে।

দীপু মনির আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বলেছেন- প্যারোলের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেখা হয়। এটা আমাদের ট্রাইব্যুনালে বিবেচ্য বিষয় নয়। ট্রাইব্যুনাল বলেছেন নির্দিষ্ট বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।

আবেদনে বলা হয়েছে, দীপু মনির স্বামী তৌফীক নাওয়াজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বামীর সেবার জন্য তার পাশে থাকা প্রয়োজন।

এর আগে গত ১৯ আগস্ট সাবেক মন্ত্রী দীপু মনিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওইদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।