May 6, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, May 5th, 2025, 7:06 pm

জুলাই শহীদ পরিবারকে সিলেট জেলা পরিষদের অর্থ সহায়তা প্রদান

এস এ শফি, সিলেট: সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজা-উন-নবী বলেছেন, বিপ্লবী আর অবিপ্লবীদের সম্মান কখনো এক হতে পারেনা। নিজের সন্তান হত্যা কোন রাষ্ট্র ও সরকারের কাজ হতে পারেনা। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেনা বুলেট তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার মানবাধিকারের পরিপন্থী।

তিনি বলেন, জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানে শহীদেরা সাম্প্রতিক কালের বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। দীর্ঘ দেড় যুগের জুলুম নিপীড়ন দুঃশাসনে দেশের মানুষ ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে যখন আকাশের দিকে তাকিয়েছিল। ঠিক সেই মুহুর্তে দেশ মাতৃকার গর্বিত সন্তানেরা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে দেশকে দুঃশাসনের হাত থেকে মুক্ত করে দিয়েছে। তাদের শাহাদাত বিশ্বে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে শহীদদের স্বপ্ন পূরণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি সোমবার দুপুরে সিলেট জেলা পরিষদের উদ্যোগে নিজস্ব তহবিল থেকে ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সিলেট জেলার শহীদ পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে
 প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে পুরোপুরি রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থাকে একটি পরিবার ও কতিপয় সু্বিধাভোগি কুক্ষিগত করে রেখেছিল। এজন্য শুধু একটি দলকে দায়ী করলে চলবেনা। আমাদেরকেও এর দায় নিতে হবে। মানুষের শুন্যতা কোনদিন অর্থ দিয়ে পূরণ হবেনা। এটি শহীদ পরিবারের প্রতি শান্তনার উদ্যোগ মাত্র। আমাদেরকে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থাকে ফ্যাসিবাদী হওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। অন্যথায় আমাদেরকে ফের জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রের কাজ জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। বিবেকের দায় থেকে সরকারের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে এটি নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রকে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠার সকল পথ বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে জুলাই শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠন করতে হবে।
সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পরিষদের প্রশাসক দেবজিৎ সিংহের সভাপতিত্বে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত  অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আনোয়ার-উজ-জামান, সিলেট আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মো. মমিনুল হক, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকার সম্পাদক মুকতাবিস-উন-নূর, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির।
জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপমার পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন কোর্ট মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা শাহ আলম। গীতা পাঠ করেন তিন্নি রায়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দ্বীপ কুমার সিংহ। অনুভুতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মোঃ আজরফ (জাবুর), ঢাকা দক্ষিণের শহীদ পাবেল আহমদ কামরুলের বড় ভাই পিপলু আহমদ, গোয়াইনঘাটের সিয়াম আহমদ রাহিমের বাবা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আনোয়ার-উজ-জামান বলেন, সমাজ থেকে বৈষম্য দুর করতে না পারলে শহীদদের আত্ম কষ্ট পাবে। তাই আমাদেরকে বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
মুকতাবিস-উন-নূর বলেন, টাকা দিয়ে শহীদ পরিবারের মূল্য পরিশোদ হবেনা। এটি তাদের পাশে থাকার একটি উদ্যোগ মাত্র। ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু একটি দলকে দায়ী করলে চলবেনা, এজন্য আমাদের মানসিকতা ও সমাজ ব্যবস্থাও দায়ী। সিলেটের শহীদ সাংবাদিক তুরাবের নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামকরণের উদ্যোগ নিলে সিলেটবাসী খুশী হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা পরিষদের প্রশাসক দেবজিৎ সিংহ বলেন, জুলাই আন্দোলনে শহীদগণ জাতির গর্বিত সন্তান। তাদের জীবনের মূল্য কোনভাবে শোধ করার নয়। আমরা নিজস্ব তহবিল থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকার শান্তনার একটি উদ্যোগ মাত্র। জুলাই আন্দোলনের শহীদের তালিকায় অশহীদ কেউ যেনো যোগ না হয় সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে জেলার ১৪ জন শহীদ ছাত্র-জনতার পরিবারের মধ্যে ১২ জনের পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দেয়া হয়।