May 15, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, May 14th, 2025, 5:35 pm

আহত ৩৮ জন ঢামেকে, কাকরাইল না ছাড়ার ঘোষণা জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

অনলাইন ডেস্ক

আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৮ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ অবস্থায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কাকরাইল এলাকায় যমুনা অভিমুখী সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন তারা।

বুধবার (১৪ মে) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সড়কে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বলেন, আমাদের শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে তার বিচার করতে হবে। ঘাতক পুলিশের বিচার করতে হবে।

পুলিশের হামলায় আহত জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, সরকারের এই কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশের বিচার করতে হবে।

এ সময় শিক্ষার্থীরা— জেগেছেরে জেগেছে, জবিয়ান জেগেছে; আমার ভাই অনাহারে, যমুনা কী করে; এসেছি যমুনায়, যাব না খালি হাতে; আমার ভাই আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিকেল ৩টার পর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে এসে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.সাবিনা শারমিন, ব্যবসায় অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।

এর আগে, সকাল ১১টায় তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চ শুরু করেন জবি শিক্ষার্থীরা। লং মার্চে লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক মানুষ আহত হন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের মোড়ে আসতেই পুলিশ হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রায় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

পুলিশের বাধার পর বৃষ্টি, কাকরাইল ছাড়েননি জগন্নাথের শিক্ষার্থীরাআহতরা হলেন- রেদোওয়ান (২৪), আসিফ (২০), রহমান (২২), আকিব (২১), আরিফ (২২), রফিক (২৫), শফিক (২৫), ওমর ফারুক(২৪), দৈনিক সংবাদের মেহেদী হাসান (২৪), অর্থিব (২১), আপেল (২১), মুজাহিদ (২৩), রায়হান (২৩), ফারুক (২৩), আবু বক্কর (২২), নিউটন (২০), হানিফ (২২), জীবন (২২), শহীদ(২০), রাসেল (২২), জিসান(২২), জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা পোস্টের ক্যাম্পাস প্রতিবেদক মাহাতাব লিমন (২৩), শহীদ (২৪), রাসেল (২৩), গৌরব (২৫), আব্দুল মান্নান (২২), নাহিদ (২৩), জুয়েল (২৩), মোহন (২২), সোহানুর রহমান সানি (২৪), মাছুমা(২০), সংগ্রাম (২০), বাইতুল (২২), রাজু (২২), সুমন (২২), রাজীব (২২), আকাশ (২২), বাংলা ট্রিবিউনের জবি প্রেসক্লাব সভাপতি আসাইফ আশরাফ (২৬)।

এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক বেলাল, সহকারী প্রক্টর নাইম সিদ্দিকি আহত হয়েছেন।

পুলিশের লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাসে আহত শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। বর্তমানে জরুরি বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের চিকিৎসা চলছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। অন্তত ৩৮ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব লিমন জানান, আমরা যৌক্তিক আন্দোলন নিয়ে যমুনার অভিমুখে লংমার্চে যাওয়ার সময় পুলিশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর লাঠিচার্জ এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কয়েকজন গুরুতর আহত এবং বেশ কয়েকজনের হাত ভেঙে যায়।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ যেভাবে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে সেটি জুলাই আন্দোলনেও হয়নি। আমাদের নারী শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। অনতিবিলম্বে এ ঘটনায় যারা দোষী তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

অন্যদিকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বর্তমানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ৩৮ জন আহত হয়েছেন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেডে জবি শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গের চেষ্টাএর আগে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল ইউজিসিতে যান। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।

আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি

আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।