রংপুর ব্যুরো: অন্তবরর্তী সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জাতীয় বাজেটে অবহেলিত রংপুরের উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুরে দাবি আদায়ে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে সমাবেশ করেছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
গণসংহতি আন্দোলন রংপুর জেলা আহ্বায়ক তৌহিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সদস্য সচিব মোফাখখারুল মুন, সংগঠক আব্দুল জব্বার সরকার, প্রত্যয় মিজানসহ অন্যরা।এ সময় বক্তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার রংপুরের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট নিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছে। কিন্তু এ জেলার উন্নয়নে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন কাজ করেনি। দক্ষিণাঞ্চলে একটার পর একটা মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলেও রংপুর ছিল বৈষম্যের শিকার। তারা শুধু উন্নয়নের আশ্বাস দিয়ে রংপুর বিভাগের দুই কোটি মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে।
গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা বলেন, সরকার প্রধান রংপুর সফরে এসে আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুর জেলাকে দেশের এক নম্বর জেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ গত নয় মাসে তার সরকার একনেকে এই বিভাগের উন্নয়নে কোনো প্রকল্প অনুমোদন দেয়নি। পতিত আওয়ামী সরকারের মত অন্তবর্রতীকালীন সরকারও রংপুরের প্রতি বৈষম্যমূলক আচারণ করছে।নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, জনগণ দাবি জানালেও বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে রংপুর বিভাগ থেকে কাউকে রাখকে রাখা হয়নি। বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগকে মনে লালন করতে হবে। আমরা চাই অবিলম্বে প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুত রংপুরকে এগিয়ে নিতে আগামী বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হোক।সমাবেশ শেষে গণসংহতি আন্দোলনের একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সালের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর ১৬ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্বারকলিপি প্রদান করে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আগামী বাজেটে রংপুরের চিনিকল, ধান-চালের সাইলো, হিমাগারসহ কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলবে বরাদ্দ দেয়া, অন্য সিটি কর্পোরেশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতা ও সেবার মান বাড়াতে উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ানো, শ্যামাসুন্দরী খালের প্রবাহ স্বাভাবিক, প্রকৃতিবান্ধব ও বহুমূখী ব্যবহারের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া, কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সক্ষমতা বৃদ্ধি, আধুনিকায়ন, সেবার মানবৃদ্ধি, রোগীবান্ধব ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দ দেয়া এবং রোগীদের সেবা ত্বরান্বিত করতে সদর হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া, রংপুর রেলের উন্নয়ন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তি, গবেষণা বাড়াতে বরাদ্দ দেয়া, সদর উপজেলায় অন্তত একটি কলেজ জাতীয়করণ করা, রংপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে বরাদ্দ দেয়া, শিল্প বাণিজ্যের প্রসারে রংপুরে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করা, রংপুর সদরে বিশেষায়িত মাতৃ ও শিশু হাসপাতাল চালু করতে প্রয়োজনীয় জনবল ও বরাদ্দ প্রদান, আলু সংরক্ষণের জন্য সরকারি হিমাগার ও প্রান্তিক চাষিদের জন্য সমবায় ভিত্তিক হিমাগার অথবা সংরক্ষণাগার স্থাপনে বরাদ্দ দেয়া।
এছাড়া, রংপুরের শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্য-ইতিহাস চর্চা ও গবেষণা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চর্চাকেন্দ্র নির্মাণ ও সকল কলাকুশলীদের আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, গণগ্রন্থাগারে দলীয় প্রভাবমুক্ত নতুন-পুরাতন বই, দেশী-বিদেশে পত্রিকা, গবেষণা, ডকুমেন্টস, সিনেমা, অনুবাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো, গণঅভ্যূত্থানে শহীদের নামফলক স্থাপনসহ জুলাই স্মৃতি সংরক্ষণাগার নির্মাণ, ক্রীড়াঙ্গনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ বাড়াতে ক্রীড়াসামগ্রী, প্রতিযোগিতা আয়োজন, ফিটনেস ট্রেনিংয়ে যথাযথ বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানানো হয় স্বারকলিপিতে।সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে গণসংহতি আন্দোলনের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেন।
আরও পড়ুন
ইলস্টোন স্কুলে বিমান দূর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে থাকবে বিএনপি: এডভোকেট আহমেদ আযম খান
জিআই পণ্য টাঙ্গাইল মধুপুরের আনারসের বাম্পার ফলন: ২০০ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা
লোভাছড়া চা বাগানে শতবর্ষের ঝুলন্ত সেতু