June 17, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, June 16th, 2025, 4:56 pm

হাসিনাকে খুঁজে পায়নি পুলিশ, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

 

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দুইজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৪ জুন দিন ঠিক করেছেন আদালত।

আরেক আসামি হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ মামলায় অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় আজ। এরপর শুনানি নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বহুল প্রচারিত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এই মামলায় গ্রেফতার আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আজ ট্র্যাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। তবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্র্যাইব্যুনালের ৩১ বিধি অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনা চান।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে সোমবার (১৬ জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ এর বিচারিক প্যানেলে এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারকরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আদালতে আজ শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আর চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।

শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বাসা ও অন্যান্য স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু গ্রেফতার করতে পারেননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, এই দুই আসামি ভারতে অবস্থান করে থাকতে পারেন। পরে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বহুল প্রচারিত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

তিনি জানান, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পাশাপাশি পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আসামি। এই তিন আসামির মধ্যে সাবেক আইজিপি মামুন গ্রেফতার আছেন। তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। কিন্তু বাকী দুজনকে পুলিশ খোঁজে পায়নি বলে জানান।

পরে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৪ জুনের মধ্যে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে বলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে গত ১ জুন শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার পাশাপাশি ট্রাইব্যুনাল সেদিন কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি অভিযোগ আনেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সাড়ে ১৪০০ ছাত্র-জনতাকে হত্যার দায় শেখ হাসিনার। তার নির্দেশ, উসকানি ও প্ররোচনায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।

শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রথম অভিযোগ, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ–নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। এতে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, নির্যাতন ও অন্যান্য অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটে।

দ্বিতীয় অভিযোগ, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন।

তৃতীয় অভিযোগ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

চতুর্থ অভিযোগ, রাজধানীর চাঁনখারপুলে আন্দোলনরত নিরীহ–নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।