খুলনা ব্যুরো:
এক সময় শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত ছিল খুলনার খালিশপুর ও আটরা শিল্পাঞ্চল। পাটকলের সাইরেন, শ্রমিকদের কোলাহল আর মালামাল পরিবহনের ব্যস্ততায় প্রাণবন্ত ছিল এই অঞ্চল। কিন্তু আজ সেখানে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা। বন্ধ হয়ে যাওয়া জুট মিলগুলো এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত। হাজার হাজার শ্রমিক পরিবার আজ চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দীর্ঘদিনের লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় খুলনা অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল। এতে চাকরি হারান প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিক। ফ্যাসিস্ট সরকার তখন বলেছিল, সাময়িকভাবে বন্ধ করে মিলগুলোকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু করা হবে। কিন্তু পাঁচ বছরেও অধিকাংশ মিল চালু হয়নি।
প্লাটিনাম, ক্রিসেন্ট, দৌলতপুর, ইস্টান, আলিমসহ ৯টি পাটকলে গত পাঁচ বছরে একাধিকবার ইজারার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হলেও কার্যকর ফল আসেনি। রাজনীতিক হস্তক্ষেপ, শর্ত জটিলতা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে মিল চালুর পরিকল্পনা বারবার ব্যর্থ হয়।খালিশপুর জুট মিলের মতো স্টার এবং ক্রিসেন্ট জুট মিলেও একই দশা। একাধিকবার চুক্তি সম্পন্ন হলেও মিলগুলো চালু হয়নি। বিজেএমসি বলছে, প্রক্রিয়া চলমান, কিন্তু বাস্তবে মাঠে তার প্রতিফলন নেই।
২০২২ ও ২০২৩ সালে খুলনার দৌলতপুর, ইস্টার্ন এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল বেসরকারি মালিকানায় চালু হয়। তবে এর মধ্যে কেবল জেজেআই মিল কিছুটা ভালো করছে — প্রতিদিন উৎপাদন হয় প্রায় ৬০ মেট্রিক টন পাটপণ্য। অন্য মিলগুলোর দৈনিক উৎপাদন মাত্র ১০ মেট্রিক টনের মতো।ফরচুন গ্রুপের অধীনে চালু হওয়া দৌলতপুর মিলের জেনারেল ম্যানেজার মো. ইসহাক আলী জানান, মিলটি ভগ্ন অবস্থায় চালু করা হয়েছে, বর্তমানে মাত্র ৩০টি তাঁত চলছে, যা পর্যাপ্ত নয়।
বেকার হয়ে পড়া হাজার হাজার শ্রমিক বাধ্য হয়েছেন পেশা পরিবর্তন করতে। কেউ রিকশা চালাচ্ছেন, কেউ অটো-সিএনজি চালিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই গ্রামে ফিরে গিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন, “বেসরকারিভাবে চালু মিলগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র দুই হাজার শ্রমিকের। অথচ একেকটি মিলে কাজ করত সাড়ে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক। যারা কাজ পেয়েছে, তাদের বেতনও অপ্রতুল।”
অন্য শ্রমিক নেতা দীন মোহাম্মদ জানান, “মিল বন্ধ করার সময় বলা হয়েছিল তিন মাসের মধ্যেই চালু হবে। কিন্তু ছয় বছরেও সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি।”
মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল হক ফারাজী বলেন শিল্প নগরের পরিবর্তে এখন ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে । আমরা শ্রমিক সংগঠন আমীরে জামাতের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি , বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী সরকার গঠন করলে খুলনা অঞ্চলের সব বন্ধ জুট মিল পুনরায় চালু করা হবে। তিনি শ্রমিকদের সাথে একাধিক বৈঠক করেছেন ও মিল এলাকা পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান।
অন্যদিকে বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয় কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বলেন, “চারটি মিল ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে চালু হবে বলে আশা করছি।”তবে এই আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না শ্রমিক সমাজ।
শিল্পাঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকরা মনে করছেন, একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। তারা দ্রুত জাতীয় নির্বাচন এবং কার্যকর সরকার গঠনের মাধ্যমে বন্ধ মিলগুলো পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন
মুরাদনগরে ভুক্তভোগী ওই নারীর বাড়িতে বিএনপি নেতা কায়কোবাদ
হালদার পাড়ে তামাক চাষ বন্ধ করতেই হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
সৎ নেতৃত্ব ও ইসলামী অনুশাসন ছাড়া মানবতার প্রকৃত মুক্তি সম্ভব নয়: গোলাম পরওয়ার