সিলেট অফিস:
সিলেটের ওসমানীনগরে দ্ইু পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজসে উমরপুর ইউনিয়নের খাদিমপুর গ্রামে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক নারীকে হয়রানি করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রব্বানী সুহেল জাল দলিল দিয়ে ওই নারীর বাড়ি ঘর দখলের পায়তারা করছেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী হাজেরা আলী পান্না মামলা করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না। বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ওই ভুক্তভোগী ব্যক্তির বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী অবসরপ্রাপ্ত আনসার ভিডিপি সদস্য মো. কামাল হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, সিলেটে জেলা পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান আশিক এবং ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোনায়েম মিয়ার প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন গোলাম রব্বানী সোহেল। গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সোহেল এলাকায় অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাজেরা আলী পান্না একজন সহজ সরল মহিলা। নাড়ীর টানে মাঝে মধ্যে দেশে আসেন। গত ৩০ এপ্রিল জাল দলিল দিয়ে হাজেরা আলী পান্নার জায়গা দখলের পাঁয়তারা এবং ৩৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে গোলাম রব্বানী সুহেলকে আসামি করে ওসমানীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পর হাজেরা আলী পান্নাকে হুমকি দিতে থাকে সোহেল ও তার সহযোগীরা। ওই চক্র হাজেরা আলী পান্নার বাড়ী ৫ দফা ভাংচুর, লুটপাট ও প্রকাশ্যে শটগান দিয়ে গুলি চালায়। এ ঘটনার সিসি ফুটেজ যুক্ত করে থানায় পর-পর আরো দুটি মামলা দায়ের করলেও পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ নেয়। প্রকাশ্যে অস্ত্র ও গুলি বর্ষণ ও ৩৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে দায়েরকৃত তিনটি মামলার এফআইআর করতে পুলিশ অনিহা প্রকাশ করে। কামাল হোসেন অভিযোগ করেন মামলা নথিভূক্ত করতে বাদী হাজেরা আলী পান্নার কাছ থেকে বড় অংকের টাকা ঘুষ নেন থানার ওসি মোনায়েম মিয়া।
তিনি বলেন, মামলা দায়েরের দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও আসামিরা গ্রেফতার হয়নি। এ ব্যাপারে সিলেটের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল মিলেনি। পরবর্তীতে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ২৯ জুন ‘ পুলিশ হেডকোয়াটার্সে ‘ আইজিপি কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ওসমানীনগর সার্কেলের দ্বায়িত্ব নেয়া পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান আশিক একজন ‘দলদাস’ পুলিশের কর্মকর্তা ছিলেন। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দমনপীড়ন ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। পট পরিবর্তনের পরও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে তিনি কৌশলে অন্তবর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম, গোষ্ঠী ও পাড়ায় দাঙ্গা এবং অরাজকতা তৈরি করতে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছেন।
কামাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বৈষম্যবিরোধী আন্দেলনের একাধিক হত্যা মামলার আসামি আকসার আলীকে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। এ সময় তার আত্মীয় স্বজনরা পুলিশের কাছ থেকে হাতকড়াসহ আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। পরে এক সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের হস্তক্ষেপে টাকায় বিনিময়ে গোপনে হাতকড়ার চাবি পৌছে দেওয়া হয়। আসামিকে গ্রেফতার না করে হাতকড়া ফেরত আনার বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার সময় ধারণ করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সময় টেলিভিশিন। সংবাদ প্রকাশ না করতে থানার ওসির সাংবাদিককে অর্থ দিয়ে ম্যানেজের চেষ্টার দৃশ্যটিও সংবাদে প্রকাশ পায়। সেই প্রতিবেদনে পুলিশের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন ছাত্রদল নেতা ছাব্বির আহমদ। এর কদিন পর পুরাতন একটি মামলায় এই ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কামাল হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে নিজ কার্যালয় থেকে পালিয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান আশিক। সারা দেশের সাথে থানার কার্যক্রম শুরু হলে পাল্টে যান সার্কেল আশরাফুজ্জামান। ঘনিষ্টতা বাড়ান সুবিধাভোগী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে। আওয়ামী সরকারের আমলে চিনি চোরাই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণেও ছিলেন তিনি। থানার কার্যক্রম শুরু হওয়ার কিছুদিন পর ওসির দ্বায়িত্ব পান মো. মোনায়েম মিয়া। সংবাদ সম্মেলনে কামাল হোসেন এই চক্রের হাত থেকে জানমাল রক্ষায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আরও পড়ুন
দুই কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় দালালদের দৌরাত্ম: আশুলিয়া ভূমি অফিসে সেবাপ্রত্যাশীরা জিম্মি
ভারতের ইন্ধনে সরকার উৎখাত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এনবিআর- রাশেদ প্রধান
কুড়িগ্রাম ২২-বিজিবির বৃক্ষরোপন কর্মসূচী-২০২৫ পালিত