আব্দুর রহমান মিন্টু:
রংপুরের আট উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের হাজারো ঘর এখনো নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের দখলে। রাতে ঘরগুলোকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দেশবিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে। এছাড়া মাদক সেবন ও বেচাকেনার পাশাপাশি এখানে চলে বিভিন্ন আপরাধমূলক কর্মকান্ড। এতে একদিকে যেমন প্রকৃত ভূমিহীনরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন, অন্যদিকে জেলাজুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কাও করছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।
জেলা প্রশাসকের অফিস ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে,ভূমি ও গৃহহীনরা এখন আশ্রয়হীনরাতে চলে আওয়ামী লীগ ও দোসরদের বৈঠক মাদক সেবনের পাশাপাশি চলে বেচাকেনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের রংপুর জেলার আট উপজেলার মধ্যে তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও সদরসহ সাতটি উপজেলাকে ভূনি ও গৃহহীন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয় বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে। এছাড়া পূর্ব থেকে যেখানে গুচ্ছগ্রাম ছিল, সেগুলো সংস্কারের পাশাপাশি ব্যারাক নির্মাণের জন্য তালিকা করা হয়।
জানা গেছে, ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নাম দিয়ে ওই সময় গৃহ নির্মাণ শুরু হয়। ছয় হাজার ৫৪৮ জন তুমি ও গৃহহীনের তালিকা করা হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো ধাপে ধাপে নির্মাণ করা হয়। প্রথম থেকে পঞ্চম ধাপে গিয়ে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে এবং তার আগে জেলায় ছয় হাজার ১৩০ জন গৃহহীনের নামে বরাদ্দ দেখানো হয়। এর মধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম ধাপে বদরগঞ্জ উপজেলার ৮১৫টি, তারাগঞ্জে ৭১৪টি, সদরে ব্যারাকসহ ৬৬৭টি, গঙ্গাচড়ায় ব্যারাকসহ ৯৯০টি, কাউনিয়ায় ব্যারাকসহ ৯১৩টি, পীরগাছায় ব্যারাকসহ ৯০৫টি মিঠাপুকুরে ব্যারাকসহ এক হাজার ৬৫৮টি এবং পীরগঞ্জ উপজেলায় ব্যাবাকসহ এক হাজার ৯৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়।
সূত্রটি আরো জানায়, প্রথম ধাপে একটি ঘর নির্মাণে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও পর্যায়ক্রমে তিন লাখ চার হাজার টাকা বরাদ্দে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, সারি সারি আধাপাকা ও টিনশেড ঘরে রয়েছে দুটি কক্ষ। প্রতিটি ঘরে ব্যয় হয় প্রায় দুই লাখ টাকা। নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে দুই শতক জমিসহ ঘরগুলো বাসিন্দাদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ঘরগুলোয় একটি রান্নাঘর ও একটি শৌচাগারের পাশাপাশি রয়েছে বিদ্যুৎ আর সুপেয় পানির ব্যবস্থাও। কিন্তু সেখানকার অধিকাংশ ঘরই ফাঁকা। কিছু কিছু ঘরে তালা দেখা গেলেও মাদকের গন্ধ বেরোচ্ছে।দেখা যায়, ঘর পেয়ে ছিলেন আকবর আলী। তার বাড়ি বারো বিগায়। কিন্তু বর্তমানে ওই ঘরে থাকেন মহিদুল নামে এক ব্যক্তি। তার কাছ থেকে জোর করে দখল নিয়েছেন আওযামী লীগ নেতা মোখলেস আলী। সবজা বেগমের ভাড়ায় বিক্রি করেছেন ইসলাম নামে এক ব্যক্তির ঘরের দখল নিয়েছেন যুবলীগের বাবলু। রংপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুায় সব ঘর ও ব্যারাকে অনিময় ও দখল দারিত্বের প্রভাব দেখা গেছে।
এ ব্যাপরে বদরগঞ্জ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা, গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, এর আগে কী অনিয়ম হয়েছে বা কী হয়নি সে বিষয়গুলো লিখিত আকারে আমাদের কাছে কেউ জানায়নি। তবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কিছু ঘরে লোক থাকে না বলে শুনেছি। ওই ঘরগুলো চিহ্নিত করে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের লোকজনকে দেওয়া হবে। পরে তাদের ভূমির দলিলসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে। এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, গৃহ ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে, পূর্বে কী করা হয়েছে, কাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এখনো কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা কাজ করছেন। তদন্তকরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আব্দুর রহমান মিন্টু
রংপুর ব্যুরো চীফ
আরও পড়ুন
পীরগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মিন্টু
বাবুগঞ্জে ঝুলন্ত অবস্থায় যুবকের মরদেহ উদ্ধার
শাবিপ্রবিতে তিনটি দোতলা বাসের উদ্বোধন