August 7, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 4th, 2025, 6:04 pm

প্রফেসর ড. এম শমসের আলীর মৃত্যুতে বিআইআইটি’র আলোচনা ও দু’আ

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ও প্রফেসর ইমেরিটাস ড. এম শমসের আলীর মৃত্যুতে আলোচনা ও দু’আ ৩ আগস্ট ২০২৫, রাতে জুমে অনুষ্ঠিত হয়। চিন্তা ও জ্ঞান সংস্কারে নিবেদিত একটি থিংক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি) এর আয়োজন করে। বিআইআইটি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিআইআইটি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজ।

উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এম আবদুল আজিজ বলেন, প্রফেসর ড. এম শমসের আলীর শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন ছিল অসাধারণ সব সাফল্যে ভরপুর। এই দেশে বিজ্ঞানের সাথে ইসলামকে কানেক্ট করার ক্ষেত্রে উনিই ছিলেন অগ্রপথিক ও অনন্য। বিজ্ঞান ও আধুনিকতার সাথে ইসলামকে সংমিশ্রণ করে মুসলিম সমাজকে এগিয়ে নিয়েছেন; এই সংক্রান্ত উনার লেকচারগুলো ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। তিনি প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও দূরশিক্ষণ বিস্তারে এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে নিরলস প্রয়াস চালিয়েছেন। ইসলামিক বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে দেশময় ছড়িয়ে দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর নলেজ এবং প্রেজেন্টেশন স্টাইল ছিল অতুলনীয়। মানুষ গড়ার ক্ষেত্রে তাঁর গাইডলাইন ছিল অসাধারণ। সর্বোপরি- বিজ্ঞান, শিক্ষা ও মানব জ্ঞানের অগ্রগতিতে তিনি সর্বদা ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আমিনুল ইসলাম তালুকদার বলেন, প্রফেসর ড. এম শমসের আলী পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ছিলেন দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরমাণু বিজ্ঞানী।  তিনি বিজ্ঞানের জনপ্রিয়করণে কাজ করেছেন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক এবং বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির সংশ্লেষণ নিয়ে লেখালেখিতে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক মসুদ মান্নান এনডিসি, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) এর প্রফেসর ড. শামসুদ্দীন আহমেদ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন রেজিস্ট্রার ড. আবুল বাশার খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) আব্দুল আউয়াল সরকার, তানযীমুল উম্মাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হাফেজ মাওলানা হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মাল্টি-ফেইথ নেইবারস নেটওয়ার্ক (এমএফএনএন) এর গ্লোবাল মুসলিম অ্যাফেয়ার্সের সিনিয়র অ্যাডভাইজার সাইয়েদ মুক্তাদির, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. ইয়াহিয়া এবং গবেষক ও লেখক মীর লুৎফুল কবীর সাদী।

 

 

আলোচকরা বলেন- প্রফেসর ড. এম শমসের আলী রেডিও ও টেলিভিশনে অসংখ্য আলোচনায় বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যেকার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেছেন। বিজ্ঞানকে কুরআনের সাথে রিলেট করা এবং কুরআনকে বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্য করা চমৎকৃত করতো। জ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন এক অনন্য পথিকৃৎ। বৈশ্বিক শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি দ্বীনের পরিপূর্ণতা বুঝতেন, আমল করতেন এবং ব্যাখায় কুরআনের রেফারেন্স সামনে আনতেন। একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের মনে অসাধারণ প্রেরণা ও আলোর সঞ্চার করে গেছেন; তিনি অনেকেরই মেন্টর ও গাইড ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর দূরদৃষ্টি, নিষ্ঠা ও শ্রেষ্ঠত্ব ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও স্থায়ী অনুপ্রেরণার অসাধারণ উৎস হয়ে থাকবে। তবে এই দেশ তাঁর মেধা ও যোগ্যতার ব্যবহার করতে এবং তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদেরকে জাতির কাছে তাঁর চিন্তা, কর্ম ও অবদানকে তুলে ধরতে হবে। তিনি কোনো দল বা গোষ্ঠীর ছিলেন না, ছিলেন পুরো জাতির ও উম্মাহর সম্পদ।

ড. ইবরাহীম খলিল আনওয়ারীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন ব্রিটিশ সাফীর এডুকেশন এর চেয়ারম্যান ড. আবুল কালাম আজাদ। কুরআন তেলাওয়াত করেন ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া (আইআইইউএম) এর ডিপার্টমেন্ট অব ফিকহ এন্ড উসূল আল ফিকহ এর পিএইচডি ক্যান্ডিডেট বেলায়েত হোসেন।

উল্লেখ্য, ড. এম শমসের আলীর জন্ম ১৯৩৭ সালের ২১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় এবং মৃত্যু ৮৭ বছর বয়সে ২০২৫ সালের ২ আগস্ট দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় ঢাকায়। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। তিনি ছিলেন- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট (বিআইআইটি)-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (বিএএস)-এর সভাপতি। তিনি ছিলেন বাংলা একাডেমির ফেলো, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য এবং আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির সদস্য। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সাইন্টিফিক ইন্ডিকেশন অব দ্য হোলি কুরআন’, ‘পবিত্র কোরআনে বৈজ্ঞানিক ইঙ্গিত’, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলিম অবদান’ এবং ‘আলাদিনস রিয়েল ল্যাম্প: সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’।  তিনি মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদক, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ স্বর্ণপদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হরিপ্রসন্ন রায় স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।