August 14, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, August 6th, 2025, 5:02 pm

ক্যান্সার আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে মায়ের দুর্বিসহ জীবন

আশরাফ আহমেদ, হোসেনপুর,কিশোরগঞ্জ: অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে  জাহিদুল ইসলাম সোহরাব ও ফাতেমাতুজ জহুরা দম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকায়  বসবাস করছিলেন । অত্যন্ত আনন্দে  ও অসুখে কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন । তাদের দুই ছেলে।  আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ বড় এবং মাহমুদুল্লাহ বিন জাহিদ ছোট। ছেলেদের ঘিরেই তাদের ছিল সুখের স্বপ্ন।  মেধাবী  দুই ছেলেকে অনেক কষ্টে ঢাকাতেই পড়াশোনা করাচ্ছিলেন ওই দম্পতি।

তাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার পুমদী ইউনিয়নের বর্শিকুড়া গ্রামে। বড় ছেলে আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ ছিলেন ১৭ বছরের এক সুদর্শন যুবক। পড়তেন ঢাকার শহিদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মা-বাবার বারণকে উপেক্ষা করেই লুকিয়ে অংশগ্রহণ করতেন বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে সবার সঙ্গে বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন আবদুল্লাহ। মা’কে না বলেই সে দুপুরে খাবার খেয়ে বের হয়ে পড়েছিলেন বিজয়ের আনন্দে ভাগ বসাতে। কিন্তু বিধিবাম, হঠাৎ একটি মৃত্যু সংবাদই যেন সুখী পরিবারটিকে স্তব্ধ করে দেয়।

জানা যায়, ঢাকার উত্তরায় বিজয় মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন আব্দুল্লাহ বিন জাহিদ। পরে স্থানীয়রা নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হঠাৎ বড় ছেলের মৃত্যুর সংবাদে তাদের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।

বড় ছেলেকে হারিয়ে মা ফাতেমাতুজ জহুরা ও বাবা জাহেদুল ইসলাম সোহরাব একরকম পাগল হয়ে যান। থেমে নেই তাদের কান্নার রোল। গত বছরের ৬ আগস্ট সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি হোসেনপুর উপজেলার বর্শিকুড়ায় বড় ছেলের লাশ দাফন করা হয়।

এভাবে সময় যেতে না যেতেই শোকে আচ্ছন্ন ওই পরিবারে নেমে আসে আরেক কালো ছায়া। সম্প্রতি খবর আসে তাদের ছোট ছেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত। ছোট ছেলে মাহমুদুল্লাহ বিন জাহিদ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে ঢাকার একটি হাসপাতালে।

একদিকে বড় ছেলের  অকাল মৃত্যু। অপরদিকে ছোট ছেলের ক্যান্সার! এসব হয়তো মেনে নিতে পারেননি বাবা জাহিদুল ইসলাম সোহরাব। ছেলের শোকে গত ১৮ মার্চ স্ট্রোক করে মারা যান তিনি। এরপর ছোট ছেলেকে নিয়ে শুরু হয় মা ফাতেমাতুজ জহুরার সংগ্রামী জীবন।

মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় শহিদ আব্দুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জহুরার সঙ্গে। তিন কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার ছেলে এবার ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতো। আমাকে না জানিয়েই সে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতো। আমার ছেলের জন্য ও আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

 

আশরাফ আহমেদ

হোসেনপুর কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি