October 20, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 8th, 2025, 9:33 pm

প্রতারক টিপুর ফাঁদে নিঃস্ব নওয়াপাড়ার অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী

এনএন অনলাইন :
দেশের অন্যতম বৃহম্তম শিল্প-বাণিজ্য ও বন্দর নগর নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ী জগতে এক ভয়ংকর প্রতারক থাবা বিস্তার করেছে। তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হতে বসেছে অসংখ্য ব্যবসায়ী। ব্যাংক ঋণের সুদের ঘানি টানতে টানতে দেউলিয়া হয়ে বসেছে অনেকে।

শত কোটি টাকা হজম করে বহাল তবিয়তে রয়েছে ভয়ংকর ওই প্রতারক মেসার্স আফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ শাহনেওয়াজ কবির টিপু। এক সময়ের সামান্য হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী টিপু প্রতারনার মাধ্যমে ব্যবসায়ে অধিক লাভের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়। গাড়ি, বাড়িসহ অসংখ্য জমি জায়গার মালিক হয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করতে শুরু করে। জনশ্রুতি রয়েছে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া টাকার একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করেছে ব্যবসায়ী নামধারী এই প্রতারক। ফলে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ীক সুনাম অর্জনকারী নওয়াপাড়া বন্দর আজ কলংকিত হতে বসেছে টিপুর মত ঠকবাজ ব্যবসায়ীর কারসাজিতে।

জানাগেছে, দেশের অন্যতম আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রপ বিভিন্ন পণ্যের পাশা পাশি গম আমদানী করে দেশের বিভিন্ন মোকামে এজেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকে। নওয়াপাড়া মোকামে নাবিল গ্রুপের গম বিক্রির এজেন্ট হিসেবে অবির্ভূত হয় মেসার্স জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ শাহনেওয়াজ কবির টিপু। তার কাছ থেকে গম ক্রয় করে অসংখ্য ব্যবসায়ী গমের ব্যবসা করে আসছিল।

নাবিল গ্রুপের এজেন্ট শাহনেওয়াজ কবির টিপু অধিকাংশ সময় (আন্ডার রেটে) কোম্পানীর বেধে দেওয়া দামের চেয়ে কমদামে গম বিক্রির কথা বলে নওয়াপাড়ার অসংখ্য ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী গম না দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে বছরের পর বছর অসংখ্য ব্যবসায়ীকে নাকানি চুবানি খাইয়েছে জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের টিপু। অবশেষে কোন কোন ব্যবসায়ী সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দিয়ে নামমাত্র কিছু টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে পুলিশের দারস্তও হয় কেউ কেউ। কিন্তু প্রতারণার কাছে তা কোন কাজেই আসেনি। সর্বশেষ নওয়াপাড়া সার, সিমেন্ট, খাদ্য শষ্য ও কয়লা ব্যবসায়ী সমিতিতে গড়ায় টিপুর প্রতারণার চিত্র। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের কতিপয় নেতাদের ম্যানেজ করে টিপু এ প্রতারণার স্বর্গরাজ্যের বিস্তার ঘটায় বলে অভিযোগ।

সরকার পতনের পর ক্ষতিগ্রস্থ্য ব্যবসায়ীরা গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। তারা টাকা ফেরৎ পেতে নওয়াপাড়া সার, সিমেন্ট, খাদ্য শষ্য ও কয়লা সমীতির দারস্ত হয়। একপর্যায়ে সমিতির কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে শালিসি বৈঠকে বসে। ওই বৈঠকে প্রতারক টিপু নিজেকে দেউলিয়া দাবি করে মেকি কান্না দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের সিমফ্যাথি আদায়ের চেষ্টা করে। সফলও হয় টিপু। ব্যবসায়ী সমিতির ওই বৈঠকে ২৮ জন পাওনাদারের একটি তালিকা করা হয়। যেখানে দেখা যায় নওয়াপাড়ার স্থানীয় ব্যবসায়ী ২৮ জন টিপুর কাছে ২২ কোটি ৪০ লাখ ৬ হাজার টাকা পান। তবে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে তালিকার বাইরেও প্রায় ১০/১২ জন ব্যবসায়ী টিপুর কাছে মোটা অংকের টাকা পান। যা তালিকায় স্থান হয়নি। শালিসি বৈঠকে ৩/৪ জন করে ব্যবসায়ীকে টিপু বাড়ি, জমি লিখে দেয়। এভাবে উক্ত ২৮ জনের হাত থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করে টিপু।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তারা বাড়ি জমি পেলেও টিপুর কাছে পাওনা টাকার অর্ধেকও উসূল হয়নি। তাছাড়া তার জমি ও বাড়ির কাগজপত্রেও রয়েছে গোজামিল। ফলে তারা তা বিক্রি করে টাকা বের করে ব্যংকের ঋণ পরিশেধে ব্যর্থ হচ্ছেন। তবে এর বাইরেও নওয়াপাড়া ও উত্তর বঙ্গের প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী টিপুর কাছে বিপুল অঙ্কের টাকা পাওনা রয়েছে।

২৮ জন পাওনাদারের তালিকা পর্লালোচনা করে দেখা যায়, মেসার্স এস কে এন্টার প্রাইজ ১৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, নিউ ভৈরব ট্রেডিং ১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা, মেসার্স ভৈরব ট্রান্সপোর্ট ১ কোটি ৩৮ লাখ ১০ হাজার টাকা, মেসার্স আঁখি এন্টারপ্রাইজ ৬৬ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, তালতলা স্টোন ৩ কোটি ৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা, উত্তরা কর্পোরেশন ১ কোটি ৫ লাখ টাকা, নিউ এসবি ট্রেডিং ৭ লাখ টাকা, ফোর্ট ইন্টারন্যাশনাল ২ কোটি ৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা, মুন্না এন্টারপ্রাইজ ১ কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, মধুমতি এন্টারপ্রাইজ ৫ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা, টিএ সিজব ট্রেডিং ৯০ লাখ ৩২ হাজার টাকা, কবীর ট্রেডিং ৬৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা, হক এন্ড কবির ১ কোটি ২৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা, এস আলম এন্টারপ্রাইজ ২২ লাখ ৩২ হাজার টাকা, নিউ এস এস এন্টার প্রাইজ ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, মেসার্স জনি এন্টারপ্রাইজ ৩২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, রহমত স্টোর ২৭ লাখ ৬১ হাজার টাকা, রানা এন্টারপ্রাইজ ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, এ এস ট্রেডার্স ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা, রাজু ট্রেডার্স ১৫ লাখ ২ হাজার টাকা, আর কে এন্টারপাইজ ৩০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, দাস ট্রেডার্স ৬২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, কৃষ্ণদাস ৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, রিজেল এন্টারপ্রাইজ ৪০ লাখ টাকা, রাইসা ট্রেডিং ৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, লিটন এন্টারপ্রাইজ ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পড়শী এন্টারপ্রাইজ ৩৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা, আঁখি এন্ড ব্রাদার্স ১৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
এসকল ব্যবসায়ীরা উপরোক্ত টাকা আন্ডাররেটে গম পাওয়ার প্রলোভনে জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের টিপুকে দেয়। এর বাইরেও অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা কোটি কোটি টাকা দিয়ে প্রতারিত। যাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। সার সমিতির শালিসে উপরোক্ত ব্যবসায়ীদের চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য করে টিপুর জমি ও বাড়ি লিখে দিয়ে সামাল দিয়েছে। যা পাওনা টাকার কিয়োদাংশ। তবুও বহাল তবিয়তে টিপু নওয়াপাড়া বন্দরে জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের নামে ব্যবসা করে চলেছে। যা নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ীকে মেকামকে ধ্বংসের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেছেন সচেতন মহল। এখনই এই প্রতারক ব্যবসায়ীর লাগাম টানা না গেলে মুখ থুবড়ে পড়বে বিশ্ব ব্যাপী পরিচিতি পাওয়া স্বনামধন্য নওয়াপাড়া ব্যবসায়ী মোকাম। এমনটিই দাবি করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এ ব্যপারে নওয়াপাড়া সার সিমেন্ট খাদ্যশষ্য ও কয়লা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শাহ্ জালাল হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, দেশের অন্যতম বৃহত্তম আমদানি রপ্তানির মোকাম নোয়াপাড়া। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপের স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজ নোয়াপাড়া তে ব্যবসা করে আসছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে গম দেয়ার কথা বলে সে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতিতে মিটিং করে তার কাছ থেকে লিখিত নেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের কারণে নোয়াপাড়ার ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে এবং পথে বসেছে অনেক তরুণ ব্যবসায়ী।

এ ব্যাপারে মেসার্স জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর সাথে যোগাযোগ করলে (০১৭৬৬-৭৮০৭৮২/ ০১৭৯১-০০৬৬০০) তিনি ফোন রিসিভ করেনি।