August 18, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, August 17th, 2025, 11:54 am

রাজধানীর মাঠ-পার্ক ক্লাবের দখলে, নিশ্চুপ সরকারি সংস্থা

রাজধানীর মাঠ ও পার্কগুলো সরকারি সম্পত্তি হলেও বিভিন্ন ক্লাবের দখলে চলে যাচ্ছে। উচ্চ আদালতের একাধিক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর উদাসীনতায় মাঠ-পার্ক রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় দখল হয়েছে। সরকারি সংস্থার অনৈতিক যোগসাজশে দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। মাঠ, পার্ক ও জলাধার দখলমুক্ত আন্দোলনের ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মাঠ ও পার্ক রক্ষায় আন্দোলনকারীদের বড় প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাশা হতাশায় পরিণত হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পরও মাঠ ও পার্কের দখলদারির কোনো পরিবর্তন আসেনি।

সংবাদ সম্মেলনে খিলগাঁও আবাসিক এলাকার পরিবেশ রক্ষা কমিটির সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, পরিবেশ আন্দোলন, মাঠ-পার্ক রক্ষা আন্দোলনে যুক্তদের জন্য হতাশার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলন হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে কথা হচ্ছে; কিন্তু কোনো অগ্রগতিই হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, তারা সংবিধান সংস্কার কমিটির সদস্য লেখক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর মাঠগুলোর দখলদারির বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসেনি। শেখ জামাল, শেখ কামালের নামে, কিংবা অন্য যে নামেই দখল হোক, সেই মাঠ আমরা ফেরত পাইনি। ইয়ুথ ক্লাব নাকি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলেছে। এখন তাদের সরানো যাবে না। এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না।’

বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ দায়িত্ব নিয়ে অত্যন্ত গর্ব করে বলেছিলেন, সব মাঠ-পার্ক জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। কোথায় উন্মুক্ত করা হয়েছে?

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশার এই সরকার বারবার আমাদের আহতই করছে। তেঁতুলতলা মাঠের বিরুদ্ধে আবার মামলা হয়েছে। মনে হচ্ছে, যুদ্ধটা আবার শুরু হলো।

সেভ ধানমন্ডি প্লেগ্রাউন্ডসের সংগঠক সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ধানমন্ডি মাঠ এক সময় উন্মুক্ত থাকলেও পরে একটি প্রভাবশালী মহল ক্লাবের নামে দখল করে নেয়। মাঠে স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে তা শুধু ক্লাবের সদস্যদের প্রশিক্ষণ মাঠে পরিণত করা হয়। এ মাঠ থেকে আয় করতে গিয়ে শেয়ারের ব্যবসা করে তারা কোটি টাকার মালিক হয়েছে। প্রতিবাদকারী পরিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিও করা হয়েছে।

গুলশানের শহীদ তাজউদ্দীন স্মৃতি পার্কের দখলের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জনস্বাস্থ্য ও নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন। তিনি বলেন, আট একর আয়তনের এ পার্ক গুলশান ইয়ুথ ক্লাব ভেঙেচুরে টার্ফ মাঠ বানিয়ে ঘণ্টায় কয়েক হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছে। জনসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তাকর্মী বসিয়ে সবুজ চত্বর ধ্বংস করা হয়েছে। আদালত পার্কটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখার নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী রাজউক একবার ইয়ুথ ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি বাতিল ও স্থাপনা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু গত ২৯ জুলাই রাজউকের অষ্টম সভায় উল্টো ক্লাবের আবেদন বিবেচনা করে চুক্তি পুনর্বহাল করা হয়েছে। এটি আদালতের স্পষ্ট অবমাননা।

বক্তারা মাঠ ও পার্ক রক্ষায় আইন সংশোধনের দাবি জানান। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে স্বল্প মেয়াদে ১৫টি দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবির মধ্যে আছে– অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ, মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী মাঠ-পার্ক সংরক্ষণ, নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত প্রবেশাধিকার, ক্লাবের বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও কৃত্রিম স্থাপনা অপসারণ, কমিউনিটি সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ তহবিল গঠন। এ ছাড়া সমন্বিত নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন, উন্মুক্ত মাঠকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, আইন ও নীতিমালা সংস্কার, মাঠ-পার্কের তালিকা প্রণয়ন, স্কুল-কলেজের মাঠ উন্মুক্তকরণ এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।