স্টাফ রিপোর্টার :
দুর থেকে বিদেশের মাটি যত স্বপ্নের এবং সহজ মনে হয় বাস্তবতা তার উল্টো। বিশেষ করে কানাডায় পড়াশোনা করার জন্য বাংলাদেশীদের যাওয়াটা হতে পারে চরম বিপদের বিষয়। সেখানের ভয়ানক বিষয়গুলো সাধারণত মিডিয়াতে কম আসে। এজন্য নেট মাধ্যমে সার্স দিয়ে এসব বাস্তব খবর জানা যায় না। সবচেয়ে বেশি যেটা হয়ে থাকে তাহলো অপহরণ, সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে আক্রমণ। শুধুযে বাংলাদেশিদের জন্য হয় তাই নয়, অন্যান্য দেশের মানুষের জন্য এমন কি সেদেশের মানুষের জন্যও এসব ঘটনা ঘটে। কলেজ বা বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়তে নতুন এজন শিক্ষার্থী সেখানে বিমান থেকে নেমে গন্তব্যে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীরা সুযোগ বুঝে অপহরণ করে, আক্রমণ করে। অবশ্য সেদেশের আইনশৃংখলা বুিহনীর অনুসন্ধান ব্যবস্থা যথেষ্ট কারর্যকর হওয়ায় বেশিরভাগ সময় সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ে এবং আক্রমণকারীরাও উদ্ধার হয়। এসব বিষয় শিক্ষার্থীরা যেমন জানে না একই সাথে অবিভাবকরাও অবগত নয়। সুধু এসবই নয় রয়েছে আরো বেশকিছু জটিল সমস্যা।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষাার উদ্দেশে কানাডায় নেমেই নিখোঁজ হয় এক শিক্ষার্থী । কোনো খোঁজ না পেয়ে এর পিতা-মাতা পরিজন ভয় ও উদ্বেগের মধ্যে থেকেছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশে কানাডার হাই কমিশন বরাবর ছেলের বিষয়ে খোঁজ জানতে মেইল করেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাননি। এই শিক্ষার্থী ২০২২ সাল থেকে ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এই সময়ের মধ্যে সে তিন চার বার বাংলাদেশ সফর করেছে এবং শেষবার ২০২৫ সালের মে মাসে এসেছিল। গত ১৬ মে শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে ভ্যাঙ্কুভারের উদ্দেশ্যে একটি ফ্লাইটে উঠেছিল। সে ১৬ মে সকাল ৭:৩০ টায় সেখানে পৌঁছায়, কিন্তু তারপর থেকে তার সাথে পরিবারের সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এবিষয়ে কানাডা ইমিগ্রেশন সেদেশে অবতরণ করেছে পর্যন্ত বলেছিলো । বিষয়টি অটোয়াতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সাথে যোগাযোগ করে সেখানের পুলিশ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজিজিনেনাসিলান কে মেইল করা হয়েছিলো। সাথে একই ধরনের প্রায় দশ বিভাগে মেইলটির অনুলিপি পাঠানো হয়। সেখানে এ বিষয়ে ভেনকুবের পুলিশ বিভাগ থেকে নিখোঁজ বিষয়ে একটি ফাইল খোলা হয়েছিল। ফাইলটি সেখানকার ভিপিডি নিখোঁজ বিভাগ গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে সেই শিক্ষার্থীর খোঁজ বের করা হয়।
মানিটোবার আরসি এমপি’র তথ্য থেকে জানাগেছে , সেখানের চেমাওয়াওইন পুলিশ ৩০ বছর বয়সী রবার্টো ইস্টারকে খুঁজছে, যে এয়ারপোর্ট রোডের একটি বাসায় গ্রেফতারের পর পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যায়। তাকে সর্বশেষ ঘন জঙ্গলের দিকে পালাতে দেখা গেছে। অন্যদিকে কিছুদিন আগে নিউজ টুয়েন্টিফোরে কানাডায় বাংলাদেশী সহ বিভিন্ন দেশের কমিউনিটির অনেক সদস্য তীর্থ নামক একজন ১১ বছর বয়সী শিশুর উপর শারীরিক নির্যাতনের প্রতিবাদে সেদেশে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করে।
সেখানকার বেশকিছু নিউজ ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, টরেন্টোর এক মহিলাকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরকে হেফাযতে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে শাহানাজ নামে ওই মহিলা তার গাড়িতে বাজারের জিনিসপত্র তুলছিলো। কেলি ইসন পার্কিং লটে ছিলেন এবং ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন। পুলিশ পরে সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মাতান গাভিশ ইনসাইড এডিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
ডান্ডার্সের গবর্র্নস রোড এবং ওগিলভি স্ট্রিটের কাছে গুলিতে ৩০ এর কাছাকাছি এক ব্যাক্তি মারা যায়। ডান্ডাস ও পামারস্টোন এলাকায় ছুরিকাঘাতে মারাত্মক জখম হলে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। সিটিভির আলেকজান্দ্রা হেলিক ব্যাখ্যা করেছে সেদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভর্তির সংখ্যা কমে গেছে এবং কনেস্টোগা কলেজে এর প্রভাব পড়েছে।
এডমন্ট পুলিশ সার্ভিস এ বছর মার্চে প্রিন্স চার্লস এলাকায় ঘটে যাওয়া একটি গোলাগুলির ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করেছে যাতে সন্দেহভাজনরা ধরা পড়ে। পিল পুলিশ ব্রাম্পটনের একটি বাড়ীতে এক বাড়ীতে হামলার ঘটনা তদন্ত করছে যেখানে এক ব্যাক্তি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা রয়েছে। এন্ড্রু ব্রেনার এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কুইন ও পিটার সংলগ্ন ডাউনডাউন এলাকায় রাতে ছুরিকাঘাতে এক ব্যাক্তি গুরতরভাবে আহত হয়েছে। আলেসান্দ্রা কার্নেইরো রিপোর্ট করেছেন, টরেন্টোতে সহিংস এক সপআহের মধ্যে পুলিশ শহরের ডাউনটাউন এলাকায় গুলির ঘটনা ঘটে এবং কেসসিংটন মার্কেট এলাকায় ছুরিকাঘাতের ঘটনা তদন্ত করছে। এছাড়া কিছুদিন আগে টরন্টো ডাউনটাউনে গোলাগুলিতে আহত হন ২জন।
টরন্টোর কিং স্ট্রিট ও সাডবুরি স্ট্রিট এলাকায় ভোররাতে গোলাগুলির ঘটনায় দুই ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে তদন্ত চলমান রেখেছে। তবে হামলার কারণ ও সন্দেহভাজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
কানাডার অন্টারিও প্রদেশের গুয়েলফে এক বারের নারী কর্মীকে অপহরণের চেষ্টা ও জোরপূর্বক আটকে রাখার অভিযোগে ৪৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২০২৫ সালের মে মাসে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় ভুক্তভোগী জানান, সন্দেহভাজন ব্যক্তি তাকে জোর করে আটকে রাখে এবং অপহরণের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তকে আটক করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপহরণ ও হামলা সংক্রান্ত মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্যদিকে কানাডার টরন্টো শহরের স্কারবারো এলাকার গর্ডনরিজ প্লেস এ একটি আবাসিক ভবনের ভেতরে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার (৫ আগস্ট ২০২৫) স্থানীয় সময় দুপুর প্রায় ২টা ৪৫ মিনিটে এই হামলার খবর পায় তারা। গুলিতে ২০ বছর বয়সী এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা গুরুতর হলেও প্রাণহানির আশঙ্কা নেই। পুলিশ ঘটনাটিকে লক্ষ্যভিত্তিক হামলা হিসেবে দেখছে এবং স্থানীয়দের সহযোগিতা কামনা করেছে। পূর্ব ইয়র্কের উডবাইন এবং ও’কনর এলাকার কাছে একটি বহুতল ভবনে ছুরিকাঘাতে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশ দুপুর আড়াইটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে এবং গুরুতর আহত অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে খুঁজে পায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে এবং ধারণা করছে, সন্দেহভাজন ও ভুক্তভোগী একে অপরকে চিনতেন। নিহত ব্যক্তির বন্ধুরা জানিয়েছেন, তার নাম ডোয়াইট এবং তার বয়স ৩৩ বছর।
কার্নেগি সেন্টারের কাছে একটি ছুরি হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাটি ডাউনটাউন ইস্টসাইডে ঘটেছে। হামলায় আহত ভুক্তভোগীকে গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং এই ঘটনায় একজন সন্দেহভাজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এটি ১৩ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে করা হয়েছে। ভিডিও থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী স্কারবোরোতে মর্নিংসাইড এবং ফিঞ্চের কোণে একটি প্লাজায় ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিশ বছর বয়সী পুরুষকে গুরুতর, জীবন-হুমকিমূলক আঘাত নিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে তার অবস্থার উন্নতি হয়। অন্য আরেকজন পুরুষও ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছিলেন, তবে তার আঘাত গুরুতর ছিল না।
তদন্ত: পুলিশ ও ফরেনসিক দল রাত থেকে ঘটনাস্থলে তদন্ত করছে। তারা প্রমাণ এবং নজরদারি ভিডিও সংগ্রহ করছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলছে। প্লাজার একটি গাড়ি ধোয়ার জায়গার বাইরে এই ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। যদিও, কাছাকাছি একটি উৎসব চলছিল এবং পুলিশ ধারণা করছে যে সেখানে শুরু হওয়া একটি মারামারি প্লাজার দিকে ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে। তবে, ঠিক কোথায় ঘটনাটি শুরু হয়েছিল তা এখনও নিশ্চিত নয়।
অন্যদিকে তদন্ত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অবহিত করা এবং পুলিশের নথিভুক্ত তথ্র অনুসারে অনুসারে কিছু বাংলাদেশি, পাকিস্তানি এবং সেখানে টোনি গ্যাং সদস্য ম্যানিটোবা উইনিপেগে অপহরণ এবং চাঁদাবাজির সাথে জড়িত রয়েছে। তথ্য মতে, টোনি গ্যাং যারা +১ (২০৪) ৯৫২-৪৩২৪ ফোন নম্বর থেকেও এক ব্যাক্তিকে অপহরণ করে চাঁদা চেয়ে কল করেছিলো।
এগুলো সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া ঘটনার কয়েকটি মাত্র। কানাডায় গেলে অপহরণ, খুন সহ নানা দুর্ঘটনা সামনে আসবে। এসব বিষয় সামনে রেখেই সেদেশে সতর্কতার সাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আরও পড়ুন
ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়, শান্তিতে নোবেল পেলেন মারিয়া কোরিনা
আলোচিত নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা আজ, ট্রাম্প কি পাবেন?
ফিলিপাইনে ৭.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা