নিজস্ব প্রতিবেদক:
গ্রাহকদের কাছে দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে। বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও ওসব গ্রাহক পাওনা টাকা পরিশোধ করছে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের কাছে বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্যাসের বকেয়া বিল বাবদ পাওনা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে গৃহস্থালি ও শিল্পসহ বেসরকারি খাতের কাছেই বিতরণ কোম্পানিগুলো পাবে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে দেশে গ্যাস উত্তোলন ও বিতরণে মোট ১১টি কোম্পানি নিয়োজিত রয়েছে। তার মধ্যে ৬টি বিতরণ কোম্পানি বেসরকারি খাতের গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করছে। গৃহস্থালি পর্যায়ের পাশাপাশি ওসব কোম্পানির গ্যাস বিল বকেয়া রাখা গ্রাহকের তালিকায় বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ইটভাটা এবং চা বাগানের মতো প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতে মোট ৯ শ্রেণীর গ্রাহকের কাছে বিতরণ কোম্পানিগুলোর গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো ওই বকেয়া আদায়ে সহসা পথ দেখছে না। কারণ বকেয়া পরিশোধে গ্রাহকরা কয়েক দফা সময় চাইলেও ওই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গ্যাস বিল বাবদ বকেয়া পাওনার পরিমাণ প্রায় ৯ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। তার মধ্যে শুধু বেসরকারি খাতের গ্রাহকদের কাছেই ৭ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। পেট্রোবাংলার আওতাধীন ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বকেয়া ওই পাওনা আদায়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ইতিমধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
সূত্র জানায়, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর বেসরকারি খাতে গৃহস্থালিতে সবচেয়ে বেশি বকেয়া পাওনা অনাদায়ী রয়েছে। ওই শ্রেণীর গ্রাহকের কাছে বিতরণ কোম্পানিগুলো পাওনা ২ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। তারপরই রয়েছে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা। ওসব শিল্প-কারখানার কাছে গ্যাস কোম্পানিগুলোর বকেয়া বিলের পরিমাণ ১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। তাছাড়াও ক্যাপটিভ পাওয়ার বা শিল্প-কল-কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন বাবদ বকেয়া রয়েছে ১ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। তার বাইরেও বিতরণ কোম্পানিগুলোর বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের (আইপিপি) কাছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা, সিএনজি স্টেশনগুলোর কাছে ৮০৯ কোটি, সার কারখানায় ৯২ কোটি, বাণিজ্যিক খাতের ১৭৮ কোটি, ইটভাটার ৪ কোটি ও চা বাগানের কাছে ১ কোটি টাকার পাওনা বকেয়া রয়েছে। সর্বশেষ জুনে সমাপ্ত গত অর্থবছরের শেষ নাগাদ বেসরকারি খাতে বিতরণ কোম্পানিগুলোর বকেয়ার পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে গ্যাসের বকেয়া বিল আদায়ে জ্বালানি বিভাগের নেতৃত্বে বিতরণ কোম্পানিগুলো নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় চলতি বছরের জুনে তিতাস দেশের বৃহৎ একটি শিল্প গ্রুপের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। পাশাপাশি বিতরণ কোম্পানিগুলো অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধেও নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭১টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। আর বকেয়া টাকা আদায় করতে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের বারবার চিঠি দেয়া হলেও সন্তোষজনক সাড়া মিলছে না। কিছু প্রতিষ্ঠান বকেয়া পরিশোধ করলেও তার পরিমাণ খুবই সামান্য। যদিও বকেয়া আদায়ে জ্বালানি বিভাগের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। তবে তা আদায় করতে না পেরে ইতিমধ্যে আর্থিকভাবে মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।
এদিকে বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (তিতাস) সবচেয়ে বেশি পাওনা বকেয়া রয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সংস্থাটির গ্রাহকদের কাছে পাওনা বকেয়া ছিল মোট ৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। তার মধ্যে বেসরকারি খাতের বকেয়া রয়েছে ৫ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। সংস্থাটি বেসরকারি ৩ শ্রেণীর গ্রাহকের কাছে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাবে। তার মধ্যে আবাসিক শ্রেণীর গ্রাহকের কাছে ১ হাজার ৮২৯ কোটি, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাছে ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা ও ক্যাপটিভ পাওয়ারে ৯৯৪ কোটি টাকা সংস্থাটির পাওনা রয়েছে। তাছাড়া অন্য বিতরণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড পাবে ৫৫৯ কোটি টাকা। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড পাবে ৪৭৬ কোটি টাকা। তার বাইরেও বেসরকারি গ্রাহকদের কাছে জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ৪৯১ কোটি, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ১২৭ কোটি ও সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ৩ কোটি টাকার বকেয়া পাওনা রয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ মোল্লা জানান, বকেয়া আদায়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। তবে কতো দ্রুত ওই বকেয়া বিল আদায় করা যাবে তা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। আগামীতে বকেয়া ও অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে আরো জোরালো ভূমিকা পালন করবে তিতাস। কভিড উত্তরণের মধ্যে বকেয়া আদায়ে কার্যক্রম আরো জোরালো করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান জানান, গ্যাসের বকেয়া বিল আদায়ে জ্বালানি বিভাগ থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কভিড মহামারীর কারণে বকেয়া আদায়ে কিছুটা ছাড় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন ওই সুযোগ আর নেই। গ্যাসের বকেয়া পরিশোধ না করায় অনেক গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বকেয়া আদায়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
আরও পড়ুন
আগামীকাল লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে যাচ্ছেন ইলন মাস্ক
শক্তিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র আর নেই