September 3, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, September 2nd, 2025, 7:18 pm

শেখ হাসিনা-কামালের নির্দেশেই জুলাই-আগস্ট গণহত্যা: আইজিপি মামুন

 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে জুলাই গণহত‍্যা সংঘটিত হয় বলে জানিয়েছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

জুলাই গণহত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেওয়ার সময় মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১- এ ১১তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণে তিনি এসব তথ্য দেন।

এদিন সকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার জন্য রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আদালতে হাজির করা হয়।

জবানবন্দিতে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব আরও বেড়ে যায়। প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন কিছু কিছু কর্মকর্তা। ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।

তিনি আরও বলেন, এসব কর্মকর্তা প্রায় রাতেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক করতেন। গোপন সেসব বৈঠক গভীর রাত পর্যন্ত চলতো। বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা হলেন—সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবিপ্রধান হারুনুর রশীদ, এসবির মনিরুল ইসলাম, ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, এএসপি কাফী, ওসি মাজহার, ফোরকান অপূর্বসহ আরও অনেকে। এর মধ্যে কারও কারও সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল।

রাজসাক্ষী মামুন জবানবন্দিতে আরও বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় চেইন অব কমান্ড মানতেন না এসব কর্মকর্তা। কিন্তু আমি চাইতাম তারা পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুক। মূলত পুলিশ বাহিনীতে গড়ে তোলা দুটি গ্রুপই এসব কর্মকাণ্ড চালাতো। এছাড়া দুই গ্রুপের নেতৃত্বদানকারীরা চাইতেন—তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।

জবানবন্দিতে র‍্যাবে থাকাকালীন টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন বা টিএফআই সেলসহ বহু বন্দিশালার বর্ণনাও দেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুন।

তিনি আরও বলেন, আমি প্রায় সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি। আমি যথেষ্ট সচেতনতার সঙ্গে চাকরি করেছি। আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না। চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে আমার দায়িত্বকালীন সময়ে এসব কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। আমি এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে এই গণহত্যা সংঘটিত হয়। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আমি গণহত‍্যার শিকার প্রতিটি পরিবারের আহত ব‍্যক্তিবর্গ, দেশবাসী ও আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন। আজ আমার দেওয়া বর্ণনা থেকে সত‍্য উদঘাটন হলে, আল্লাহ যদি আমাকে হায়াত দান করেন, তাহলে বাকি জীবনটায় কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাবো। আপনারা আমার জন‍্য দোয়া করবেন।

এরপর তাকে আংশিক জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

এই মামলায় এখন পর্যন্ত ৩৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বিভিন্ন বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা।

এর আগে গত ১০ জুলাই ছাত্র-আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

ওইদিন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠনের সময় মামুন এসব কথা বলেন।

একই দিন এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।

এ মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দ তালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন।

এনএনবাংলা/