শুক্রবার তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একদল বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাই কমিশনের গাড়িতে ডিম ছুড়ে মারেন এবং কিছুক্ষণের জন্য তাদের পথ আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে নিবৃত করেন।
হামলার সময় মাহফুজ আলম গাড়িতে ছিলেন না। বাংলাদেশ হাই কমিশন জানায়, পুলিশ তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছিল এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ নিশ্চিত করেছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কে সরকারি কাজে থাকাকালীন মাহফুজ আলমের ওপর হামলার পর এবার লন্ডনেও এ ঘটনা ঘটল। বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের একটি অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা ডিম (এবং কয়েকজনের বর্ণনা অনুযায়ী বোতল) ছুড়ে মারে ও কাচের দরজা ভেঙে দেয়; পরবর্তীতে মিশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, যার মধ্যে স্টেট ডিপার্টমেন্টের স্থানীয় অফিসও রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রকাশ্যে এই হয়রানি চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
বাংলাদেশের জনগণ এবং দুই দেশের কর্তৃপক্ষ সভ্যতা ও মূল্যবোধের পক্ষে অবস্থান করলেও এই ধরনের হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত দুর্বৃত্তরা বর্বরতা ও সহিংসতার জগতে বাস করছে। গণতন্ত্রে এমন কোনো আচরণের স্থান নেই যেখানে যুক্তির বদলে আক্রমণ এবং তর্ক-বিতর্কের পরিবর্তে সন্ত্রাসকে বেছে নেওয়া হয়।
নিউ ইয়র্কে হামলার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, সহিংসতা কোনো প্রতিবাদ নয়; ভয় দেখানো কোনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়। একই বক্তব্য লন্ডনের ঘটনায়ও পুরোপুরি প্রযোজ্য।
নিউ ইয়র্কের ঘটনার পর আমরা যে নীতিতে জোর দিয়েছিলাম এবারও তা পুনর্ব্যক্ত করছি: বাকস্বাধীনতা, সমাবেশ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গণতন্ত্রের ভিত্তি, তবে তা অবশ্যই দায়িত্ব ও শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে।
কনস্যুলার যানবাহনকে টার্গেট করা এবং চলাচলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা কেবল দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, এ আচরণ দুই দেশের মাঝে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষায় প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকেও লঙ্ঘন করে। আমরা মেট্রোপলিটন পুলিশের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই এবং অপরাধীদের শনাক্ত করে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের আহ্বান জানাই।
যারা এই আচরণ সংগঠিত করেছে বা প্ররোচিত করেছে তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই: শিশুসুলভ আচরণ থেকে বিরত থাকুন। যদি আপনারা সত্যিই আপনাদের নীতিতে বিশ্বাস করেন, তাহলে তা শান্তিপূর্ণভাবে, আইনগতভাবে এবং মর্যাদার সঙ্গে উপস্থাপন করুন। ডিম ছোড়া, মারামারি করা বা ভয়ভীতি প্রদর্শন কারো মন জয় করে না; বরং এতে শুধু প্রমাণ হয় যে আপনাদের আর কোনো যুক্তি অবশিষ্ট নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আয়োজকগণ এবং প্রবাসীদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই, সভ্য সংলাপের পক্ষে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করুন। কঠিন আলোচনার আয়োজন করুন, কিন্তু এমন আচরণ বজায় রাখুন যা বক্তা, শ্রোতা এবং বৈধ প্রতিবাদকারী উভয়কেই সুরক্ষিত রাখে।
কে, কত জোরে চিৎকার করতে পারে বা কতটা সহিংস হতে পারে তা আন্দোলনের মাপকাঠি নয়, বরং আন্দোলনের মূল্যায়ন নির্ভর করে সেটি কতটা শৃঙ্খলা, মর্যাদা ও দায়িত্ববোধ বজায় রাখতে পারে সেসবের ওপর।
সরকার এ ঘটনায়-
১. মেট্রোপলিটন পুলিশকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত সম্পন্ন করার আহ্বান জানাচ্ছে, যেসব ভিডিও ফুটেজ দেখা যাচ্ছে সেগুলো যাচাই করে অপরাধীদের (ভাঙচুর, হামলা, বাধাদানকারী ব্যক্তি) সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনুন।
২. রাজনৈতিক নেতা এবং সংগঠকদের আহ্বান জানাচ্ছে, রাজনৈতিক সমর্থন যাই হোক না কেন, আপনারা জনসাধারণের মধ্যে সহিংসতা এবং ভয় দেখানোর ঘটনা প্রকাশ্যে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করুন।
৩. সরকার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। একইসঙ্গে কর্মকর্তাদের, শিক্ষার্থীদের ও নাগরিকদের নির্ভয়ে মত প্রকাশ ও সমাবেশ করার সমান অধিকারকেও সমর্থন করে।
গণতন্ত্রে আবেগের প্রয়োজন আছে; তবে আত্মনিয়ন্ত্রণও সমানভাবে প্রয়োজন। বাংলাদেশকে আমরা একটি এমন গণতন্ত্রে রূপান্তরিত করতে চাই যেখানে সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা সমানভাবে রক্ষা পায়। সেই লক্ষ্যে আবেগ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ দুটোই প্রয়োজন।
এনএনবাংলা/
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরও কমতে পারে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
জেন–জি আন্দোলনে নিহতরা শহিদ; পরিবার পাবে ১০ লাখ রুপি: সুশীলা কারকি
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ কমানো হতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা