সিলেট অফিস :
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বড়গাং নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বালু পাথর উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যন্ত্র মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের প্রতি দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাগণ।
জানাগেছে, ইজারার কথা বলে অধিক মুনাফার আশায় পরিবেশবিধ্বংসী বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলনে করা হচ্ছে।
ইজারাদারদের সহযোগী হিসেবে যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা প্রশাসনের সহযোগীতায় বোমা মেশিন বসিয়ে বারকি শ্রমিকদের আয়ের উৎস বন্ধ করে দিচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ফেরিঘাট (বড়গাং) নৌকা বারকি শ্রমিক সমিতির পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও প্রশাসন আমলে নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখাযায়, অবৈধভাবে বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছে কথিত রেজাউল ইসলাম রাজা গংরা। তাদেরকে বৈধতা দিতে নদী খননের জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে চুক্তিনামার ১১ নং কলামে রয়েছে বলে দাবি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
অথচ চুক্তিনামার ১১ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে নৌ-বন্দর সীমার মধ্যে বালু উত্তোলন ও ড্রেজিং এর কার্যক্রম চালানোর জন্য ড্রেজার দ্বারা নৌ-পথে নৌ-চলাচল বিঘনিত হইলে বা অননুমোদিত ড্রেজার বা বিধি বহির্ভূতভাবে ড্রেজার মোতায়েন করিলে নৌ-আইন ভঙ্গের কারণে বা নৌ-নিরাপত্তা বিঘনিত হইবার কারণে সরকার কর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত কর্তৃপক্ষ ও ঝ ঙ-১৯৭৬ অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে এবং ইজারা গ্রহীতা তা মানিয়া নিতে বাধ্য থাকিবেন। অথচ বড়গাং নদীটি একটি খালের মতো যাহার দু’পাশে বসবাস করে শত শত পরিবার।
এখানে ড্রেজার মেশিন চালানুর মতো কোন পরিবেশ তৈরি হয় নি। প্রকৃত ইজারাদার শনি সোহা এন্টার প্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী চন্দন তালুকদার তিনিও পরিবেশের বিপর্যয় এবং শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলনে দ্বিমত জানান।
বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে গত (১১ আগস্ট) সহকারি কমিশনার (ভূমি) জৈন্তাপুর ও (৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে ২টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। ভিটেমাটি হারানোর আশংকা করছেন নদী পাড়ের মানুষজন। বিনষ্ট হচ্ছে ফসলী জমি, বর্ষা এলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে অসংখ্য ঘরবাড়ী।
বোমা মেশিন ব্যবহার করে বালুর সাথে পাথর উত্তোলন করায় পরিবেশের জন্য মারাত্বক হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর তীরের ভূমি ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় জনসাধারণ একাধিকবার অভিযোগ করা সত্তেও রহস্যজনক কারনে ব্যবস্থা নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন। বড়গাং নদী জৈন্তাপুর উপজেলার ১নং নিজপাট এবং ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন অংশে প্রবাহিত। বালু উত্তোলনের অধিকাংশ জায়গা নিজপাট ইউনিয়নের আওতাভূক্ত। নদীর দু-ধারে রয়েছে লক্ষীপ্রসাদ, রূপচেং, গোয়াবাড়ী, পাখিবিল, মাঝরবিল, কালিঞ্জিবাড়ী, হর্ণি, বাইরাখেল, নয়াগ্রাম সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবারের বসতি। এসব গ্রামের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে উল্লেযোগ্য শীম এবং বরবটি চাষ হয় এই অঞ্চলে। অথচ বালু উত্তোলনের নামে এসকল কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ বড়গাং নদীর ইজারা বন্ধ থাকায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হলেও ২০২৪ সালে সরকারীভাবে ইজারা প্রদান করা হয়। কিন্তু ইজারাদার কোন রকম সরকারী নীতিমালা মানছেন না মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
শুধু তাই নয় বোমা মেশিনের থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নদী পাড়ের কৃষি জমি, বাড়ীর আঙ্গিনা। বড়গাং নদীর উজানে মাঝরবিল গ্রামের গরুরঘাট এ বোমা মেশিন দিয়ে রীতিমত পাথর উত্তোলনে জড়িত রেজাউল ইসলাম রাজা গংরা। তবে তিনি ব্যবসায় শেয়ার থাকার স্বাকীর করেন। কিন্তু বোমা মেশিনের সাথে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানান।
বালু মহাল লীজ প্রদানে ইজারাদার এবং সরকার পক্ষের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ১১ নং কলামে উল্লেখ রয়েছে, নদী গর্ভে এমন কোন যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না, যাহা দ্বারা জনসাধারণের চলাচলে বিগ্ন ঘটে, জান-মালের ক্ষতি সাধিত হয় বা পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়, নদীতে ড্রেজার বা বোমা মেশিন ব্যবহার করলে সরকার কর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত আই এস ও ১৯৭৬ অনুযায়ী ইজারা গ্রহীতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বিধিবর্হিভূত বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের উদাসীনতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ১৪৩১ বাংলা সনের ইজারাদার একি স্থানে বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন করায় বর্তমান সহকারি কমিশনার অভিযান চালিয়ে মেশিনটি বন্ধ করে দেন। চলতি বাংলা সনে ইজারাদার পুনরায় বোমা মেশিন বসালে গত (৪ মে) আবারও বোমা মেশিনটি সরানোর নির্দেশ দেন। এর পর থেকে বোমা মেশিনের মালিক পক্ষ রেজাউল ইসলাম রাজার মাধ্যমে প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলায় স্থানীয় প্রশাসন আইনের ফাঁক ফোকড় বের করে পুনরায় বোমা মেশিন চালানুর অনুমতি দেন।
এ ব্যাপারে বড়গাং নদীর ইজারাদার চন্দন তালুকদার সাথে আলাপ কালে তিনি বোমা মেশিন চালনায় সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বলেন আমি এর পক্ষে নয়। কেউ যদি বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন করে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করছি। তিনি বারকি শ্রমিকদের নৌকা দিয়ে বালু সংগ্রহ করার সহযোগীতা করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান করেন।
কেউ যদি বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর আহরণ করে থাকে তবে এ বিষয়ে আমার জানা নেই।
অপরদিকে অভিযোগকারি আব্দুস সামাদ বলেন, আমরা বারকি শ্রমিক আমাদের শ্রমের বিনিময়ে সংসার চলে। এখানে যদি বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন করা হয় তাহলে আমাদের রুজি রুটি বন্ধ হয়ে যাবে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর সিলেট থেকে এটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে আসলে সত্যতা দেখতে পেয়ে নৌকা দিয়ে বোমা মেশিনটি অপসারণ করে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি কালে একটি কল আসলে বোমা মেশিন যতাস্থানে রেখে চলে যান। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বোমা মেশিনের বৈধতা আছে বলে আমাকে চলে যেতে বলেন।
অন্যদিকে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমার সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, বড়গাং নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়েছে। ইজারাদারের সাথে বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। নদীর গভীরতার জন্য এই নদীতে বোমা মেশিন চালাতে পারবে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন
টানা বৃষ্টিতে রংপুরে সবজির দাম দ্বিগুণ মাঠে ফসল তলিয়ে বিপাকে কৃষক, বাজারে চাপে ক্রেতা-বিক্রেতা
মুরাদনগরে যুবকের মরদেহ উদ্ধার, পরিবারের সন্দেহ হত্যা
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের প্রাণের দাবি: একটি স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন