সিলেট অফিস :
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন( বিএসটিআই) ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্দ্যোগে ভোজ্যতেল ক্রয়-বিক্রয়ে অনিরাপদ ড্রাম ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার লক্ষ্যে স্থানীয় অংশীজনের ভূমিকা সংক্রান্ত জেলা এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃক সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে স্হানীয় অংশীজনের ভূমিকা সংক্রান্ত জেলা এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মোঃ রেজাউন-নবীর সভাপতিত্বে
এডভোকেসি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই এর মহাপরিচালক( গ্রেড-১) এস এম ফেরদৌস আলম।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মুঃ মাসুদ রানা,
সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, বিএসটিআই, প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালকগণ ও সহকারী পরিচালকগণ, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ, সিলেট জেলার বিভিন্ন বাজার মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রতিনিধিবৃন্দ, জেলার বিভিন্ন তেল ব্যবসায়ীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
বিএসটিআই এর কর্মযজ্ঞ বিষয়ে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম আবু সাঈদ।
খোলা ভোজ্যতেলের ক্ষতিকর দিক ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের লার্জ স্কেল ফুড ফরটিফিকেশন প্রোগ্রামের, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডাঃ রীনা রানী পাল।
ভোজ্যতেল পরিবহণ, সংরক্ষণ এবং বাজারজাতকরণের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক ড্রামের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি বর্তমানে একটি বড় উদ্বেগের বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। এসব নন-ফুড গ্রেড কেমিকেলের ড্রামগুলো অবিলম্বে বিকল্প প্যাকেজিংয়ে প্রতিস্থাপন করা উচিত। পাশাপাশি, ভিটামিন সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য স্বচ্ছ প্যাকেজিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও তিনি অভিহিত করেন। ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি ঘাটতি মোকাবেলা করার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ও সুশীল সমাজের সহায়তায় কেমিকেল ড্রামের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বিশেষত, ভিটামিন এ ও ডি এর অভাবের কারণে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে, এবং তাই আগামীতে ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি মিশ্রণের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। এই উদ্যোগগুলো গ্রহণ করার মাধ্যেম ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্বাস্থ্যবান পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
কর্মশালায় সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাঃ মোঃ আনিসুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, অনিরাপদ এই খোলা ভোজ্যতেলের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। এখন সচেতন না হলে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এর যে ক্ষতিকর প্রভাব স্বাস্থ্যের উপর পড়বে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ব্যবসায়ীদের অস্বাস্থ্যকর ড্রাম ফুড-গ্রেড প্যাকেজিংয়ে প্রতিস্থাপন করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। পাশাপাশি সামাজিক নেতৃবৃন্দকে খুচরা বিক্রেতাদের তদারকি করতে হবে এবং ভোজ্যতেলের বাজার সুরক্ষিত রাখতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসটিআই এর মহাপরিচালক (গ্রেড-) এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ আইন ২০১৩ সালে পাস হয়েছে এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিএসটিআই ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এই আইন বাস্তবায়নে কাজ করছে। বর্তমানে বাজারে ড্রাম ও প্যাকেটজাত উভয় ধরনের ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে। ড্রামজাত তেলের গুণগত মান মানদণ্ডের নিচে এবং এতে ভিটামিন ‘এ’ এর ঘাটতি রয়েছে। অথচ ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে অধিকাংশ মানুষ ক্যান্সার, হৃদরোগ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই সচেতনতামূলক সভার মূল প্রতিপাদ্য জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষায় সকলেই সচেতন হয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি বিএসটিআই এর গুরুত্বপূর্ণ দিক কর্মশালায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই কর্মশালা। স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে বিএসটিআই যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।
তিনি বাংলাদেশে ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ বিষয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এর সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। তিনি খোলা ভোজ্যতেল এর ক্ষতিকর দিক বর্ণনার পাশাপাশি প্যাকেটজাত ভিটামিন এ ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ ভোজ্যতেলের সুফল সম্পর্কে সভায় উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ আইনের আওতায় পিইটি বোতলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা গেলেও খোলা তেলে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নি। তিনি আরও বলেন, খোলা তেল বন্ধ করে প্যাকেজিং এর আওতায় নিয়ে আসলে তাতে ভিটামিন এ ও ডি নিশ্চিত করাসহ কতিপয় ব্যবসায়ীদের অবৈধ চর্চা সনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। আলোচনায় তিনি বলেন, বিএসটিআই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নয় বরং ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা প্রদান করে। পরিশেষে তিনি কর্মশালার সফলতা কামনা করেন এবং আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলে মিলে সম্মিলিত ভাবে কাজ করবেন মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এরপর মুক্ত আলোচনায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরিচালক কর্মশালায় আগত অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।
সভার সভাপতি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মোঃ রেজাউন-নবী বলেন, ভোক্তা স্বার্থে খোলা সয়াবিন তেল বন্ধ করে প্যাকেজিং এর আওতায় এনে তাতে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। তিনি কর্মশালায় চলমান ভোক্তা অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের চিন্তা-চেতনা, নৈতিকতা ও মননে উন্নয়ন করা প্রয়োজন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, জেলা পর্যায়ের খাদ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি কেমিকেল ড্রামে ভোজ্যতেল বিপণন বন্ধ করবে এবং ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে। তিনি আরও বলেন, বিএসটিআই সার্বিক কার্যক্রমসহ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এর সাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধকরণ, প্যাকেজিং মানোন্নয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় পর্যায়ের সকল কার্যক্রমে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
আরও পড়ুন
আ.লীগের দলীয় কার্যালয়ের কথা বলে স্কুলের ভিতরে তিনতলা বিল্ডিং বাড়ি, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পানিতে ডুবে এক ব্যক্তি নিখোঁজ
টাঙ্গাইলে বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা