ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একদিনে অন্তত ৯১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে আছেন আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সালমিয়ার পরিবারের সদস্য এবং গাজা সিটি থেকে পালানোর সময় প্রাণ হারানো চারজন।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, শনিবার সারাদিনের হামলায় হতাহতদের মধ্যে ছিলেন বাস্তুচ্যুত মানুষ বহনকারী ট্রাকের যাত্রী, একটি পরিবারের সদস্য এবং বহু সাধারণ মানুষ।
ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে এবং স্থানীয়দের দক্ষিণের তথাকথিত “কনসেন্ট্রেশন জোনে” ঠেলে দিতে আকাশ ও স্থলপথে হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে আবাসিক ভবন, স্কুলে তৈরি আশ্রয়কেন্দ্র, বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু এবং পালিয়ে আসা মানুষের ট্রাক। শুধু এসব আক্রমণেই অন্তত ৭৬ জন নিহত হয়েছেন।
দিনের শুরুতে ড. আবু সালমিয়ার পারিবারিক বাড়ি বোমায় ধ্বংস হয়। এতে তার ভাই, ভাবি ও তাদের সন্তানসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হন। ভেঙে পড়া আবু সালমিয়া বলেন, “আমি জরুরি বিভাগে দায়িত্বে ছিলাম। হঠাৎই ভাই ও ভাবির মরদেহ সামনে আসে। এখন আর কিছুই অবিশ্বাস্য নয়— প্রিয়জনেরা হয়তো শহীদ হয়ে যাচ্ছে, নয়তো আহত হয়ে আসছে।
হামাস এ হামলার নিন্দা জানিয়ে একে “চিকিৎসকদের গাজা ছাড়তে বাধ্য করার রক্তাক্ত সন্ত্রাসী বার্তা” বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী ১ হাজার ৭০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যা করেছে এবং আটক করেছে আরও ৪০০ জনকে।
অন্যদিকে, গাজার নাসর এলাকায় একটি ট্রাককে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় অন্তত চারজন নিহত হন। তাদের মরদেহ রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি জানান, হাজারো মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণ, কামান ও ড্রোন হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “ইসরায়েল বিস্ফোরকভর্তি রোবটও ব্যবহার করছে, যা পুরো এলাকা ধ্বংস করে দিচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিটি বিস্ফোরণে মনে হচ্ছে ভূমিকম্প হচ্ছে।”
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে গাজার প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এর আগে সেখানে বসবাস করতেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। কেবল গত দুই সপ্তাহেই ইসরায়েলি সেনারা অন্তত ২০টি বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু নিরাপত্তা খুঁজতে পালানো মানুষজন এখন আরও কঠিন সংকটে পড়েছেন। হিন্দ খুদারি বলেন, “মানুষ রাস্তায় তাঁবু ফেলছে। নেই পানি, নেই বিদ্যুৎ, নেই কোনো অবকাঠামো— তাদের আর কোনো বিকল্পও নেই।
এনএনবাংলা/
আরও পড়ুন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউনে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা
উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন ভিপি নুর
ডেঙ্গুতে দেশে একদিনে রেকর্ড মৃত্যু