বাবুগঞ্জ(বরিশাল):
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সাগর হাওলাদার (২৪) মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্যের জাল। এটি আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, এই নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। বিভিন্ন জায়গায় চলছে জল্পনা কল্পনা। পুলিশ বলছেন প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্য কোন রহস্য থাকলে উৎঘাটন করতে সময় লাগবে। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের লাফাদী গ্রামে সাগরের শ্বশুর মাহাবুব মুন্সির বাসায় রাত সাড়ে ৮ টায় অসুস্থ হয়ে পরেন। শনিবার(২০ সেপ্টম্বর)সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাগর। তবে সাগরের বাবা আনিস হাওলাদার এবং তার শাশুড়ি সুখি বেগমের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বললে উভয়ই পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দেন। জানা গেছে, নিহত সাগরের পিতা আনিস হাওলাদার। বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের লাফাদী গ্রামের বাসিন্দা। অপর দিকে সাগরের স্ত্রীর মারিয়া আক্তার,পিতা মাহাবুব মুন্সি। তারা একই গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক থেকে একই এলাকায় বিয়ে করেন সাগর। তবে সংসার জীবনে অভাব-অনটনের কারণে তাদের দাম্পত্যে প্রায়ই কলহ লেগে থাকতো। এর মধ্যে স্ত্রী অভিমান করে বাবার বাড়িতে চলে যান। শুক্রবার(১৯ সেপ্টম্বর) সন্ধায় সাগর তার স্ত্রীর মারিয়া আক্তারকে শশুর বাড়িতে আনতে যায়। শশুর বাড়িতে গিয়ে মারিয়াকে না পেরে ঘরে থাকা কীটনাশক ওষুধ খেয়ে ফেলে। এতে সাগর অসুস্থ হয়ে পরলে তার শাশুড়ি ও পরিবারের লোকজন প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে সাগরের অবস্থা অবনতি হলে রাতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সাগরের বাবা আনিসুর হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, মারিয়া অন্য ছেলের সাথে পরকীয়া প্রেমের খবর জানতে পারি আমরা। সেটা নিয়ে মারিয়ার সাথে সাগরের ঝগড়া বিবাদ হলে মারিয়া বাবার বাড়িতে চলে যায়। তারপর থেকে স্ত্রী মারিয়া, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং মারিয়ার ভাই তাকে মানসিক ভাবে চাপ ও নির্যাতন করে আসছিল। ঘটনার দিন শুক্রবার সন্ধ্যার পরে শাশুড়ি সাগরকে বাড়িতে ডেকে নেয়। বাসায় বসে শ্বশুর ও শাশুরীসহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সাগরের কথা কাটাকাটি হয়। তখন মারধর করে মুখে কীটনাশক ঢেলে দিলে সাগর অসুস্থ হয়ে পরলে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে শাশুড়ি ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পালিয়ে চলে যায়। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাগরের মৃত্যু হয়। সাগরের স্ত্রী মারিয়া আক্তার বলেন, সাগর দীর্ঘদিন যাবৎ বেকার জীবন অতিবাহিত করছিলেন। সে নেশাগ্রস্ত হয়ে পরেন। সেটা নিয়ে তারসাথে একমাস আগে ঝগড়া হলে আমি বাবার বাড়িতে চলে আসি। সাগর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তার কারনে অভিমান করে বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে। তবে মারিয়ার এই দাবি প্রত্যাখান করে সাগরের পরিবার অভিযোগ করেন, তার কোন অভিমান ছিল না। সাগরকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে তার স্ত্রী মারিয়া আক্তার ,শাশুড়ি ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। সাগরের শাশুড়ি সুখি বেগম বলেন, সাগর মাঝে মধ্যে আমার মেয়ে মারিয়াকে মারধর করত। গত একমাস আগে সাগর মেয়েকে মারধর করলে মারিয়া আমাদের বাড়িতে চলে আসে। শুক্রবার সন্ধায় সাগর মারিয়াকে নিতে আমাদের বাড়িতে আসে। তখন তাকে নাশতা খাওয়ার জন্য বললে পরে খাবেন বলে পাগলের মতো করতে থাকেন। এ সময় সাগর অস্বাভাবিক আচরণ করেন। এরপর কিছু সময় মারিয়াকে খুঁজতে থাকেন সাগর। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে না পেয়ে ঘরে থাকা কীটনাশক ওষুধ পান করে অসুস্থ হয়ে পরে। তখন আমি চিৎকার দিলে বাড়ির ও পরিবারের লোকজন প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে সাগরের অবস্থা অবনতি হলে রাতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন সাগরের বাবা আনিসুর হাওলাদারকে ফোন দিলে, তিনি রিসিভ করেনি। তারপর মাধবপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানকে ফোন দিয়ে খবর দিলে সাগরের বাবা রাত ১১টায় হাসপাতালে আসে। শনিবার সকালে আমরা জানতে পারি সাগরের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন উল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হলেও অন্য কোন রহস্য থাকলে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
আরও পড়ুন
রংপুরে ভেজাল গুড় উৎপাদনের দায়ে ব্যবসায়ীকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
গঙ্গাচড়া যুব ফোরাম ও শিশু ফোরামের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী উপহার
সমাজ উন্নয়নে স্কাউটদের ভূমিকা শীর্ষক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত