October 12, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, September 25th, 2025, 6:15 pm

সিটি বাইপাস  ইটের সোলিংয়ে জোড়াতালি

খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার সামনে থেকে জয়বাংলা মোড় পর্যন্ত সড়কটি খুলনা সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের অধীনে। এর মধ্যে ময়ূরী সেতুর পূর্বপাশের মালিক কেসিসি। পশ্চিম অংশের দেখভালের দায়িত্ব এলজিইডির। সড়কটি মহানগরীর অন্যতম প্রধান প্রবেশদ্বার হওয়া সত্ত্বেও বেহাল দশা লাঘবে উদাসীন কর্তৃপক্ষ। ২ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক দিয়ে ১৮ জেলার পরিবহন নগরে যাতায়াত করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেসিসি’র নিয়ন্ত্রণে থাকা ৮০০ মিটার রাস্তা নির্মাণে সম্প্রতি দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ শুরু হলেও মাঝ পথে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বর্ষায় খানাখন্দে চলাচল অযোগ্য রাস্তাটিতে ইটের সোলিং দিয়ে আপাতত জনভোগান্তি লাঘবের চেষ্টা করছে কেসিসি।

এদিকে, এলজিইডি’র নিয়ন্ত্রাধীন অংশটি পুরোপুরি বেহাল। সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই সেখানে। মাত্র আড়াই বছর আগে পুননির্মাণ করা হলেও বর্তমানে নাজুক অবস্থা রাস্তাটির। সম্প্রতি এ অংশটুকু সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছে এলজিইডি। তবে কবে বরাদ্দ পাওয়া যাবে সে বিষয়ে সুনিদিষ্ট তথ্য নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সোনাডাঙ্গা থানার সামনে থেকে ময়ুরব্রীজ পর্যন্ত সড়কে সম্প্রতি ইটের সোলিংয়ের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অর্ধেক রাস্তায় ইট বিছানো শেষ হয়েছে। বর্ষা শুরুর আগে রাস্তাটি সংস্কার না করায় বড় বড় খানাখন্দে পরিণত হয়েছে।

অন্যদিকে, এলজিইডি অংশের রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। রাস্তার পাথর উঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে গর্তগুলোতে পানি জমে আটকে যাচ্ছে গাড়ি, প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। দুই থেকে আড়াই ফিটের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। অংশটি রীতিমত মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফলে সড়কটিতে পরিবহন চলাচল নেমে এসেছে অর্ধেকে।

পরিবহন চালকরা জানিয়েছেন, সড়কটির বর্তমান বেহাল অবস্থায় আন্তঃজেলা পরিবহন সেবায় যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এবং বাস ও ট্রাক উল্টে যাত্রীদের প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা বাড়ছে।

জানা যায়, খুলনার সঙ্গে বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং শহর সম্প্রসারণে ২০১৩ সালের জুনে বাইপাস সড়কটি নির্মাণ করে কেডিএ। প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হয় ২০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কেডিএ সড়কটির ৭৮০ মিটার অংশ খুলনা সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করে। অন্য অংশ এলজিইডিকে বুঝিয়ে দেয়।

কেসিসি সূত্রে জানা যায়, সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পাশ থেকে ময়ুর ব্রিজ পর্যন্ত ৭৮০ মিটার সড়কটি ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে চারলেনে উন্নীত করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সড়কের দু’পাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে ড্রেন নির্মাণসহ হাইওয়ে স্টান্ডার্ডে এটি তৈরির কথা বলা হয়েছে। ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও জমি সংক্রান্ত জটিলতায় টেন্ডার আহবান করতে পারছেনা কেসিসি।

কেডিএ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-২০১০ সালে রাস্তার জন্য ৬০ ফিট জমি অধিগ্রহণ করে সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়। ৭৮০ মিটার রাস্তার একটি অংশে দুটি মৌজার(দেনারাবাদ ও বানিয়াখামার) সীমানা বিদ্যমান। ফলে পূর্বের ম্যাপ অনুযায়ী জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া জমি অধিগ্রহণ করে নির্ধারণ করা বেশিরভাগ সীমানা পিলারের অস্তিত্ব নেই। অধিগ্রহণ করা জমির অনেক জায়গায় বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি কিছু অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বাবু বলেন, ‘সংস্কারের অভাবে সড়কটি একদম চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে চলাচলে বেগ পেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও পরিবহন চালকদের। কিছুদিন আগে দেখলাম কেডিএ অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করছে। তারপর আর খবর নেই। যা উদ্ধার করেছিল তা আবার দখল হয়েছে। তবে সম্প্রতি কেসিসি কিছু অংশে ইটের সোলিং করেছে।

ময়ুর আবাসিকের সামনের এক চা দোকানি জানান, ময়ুর ব্রীজ থেকে জয়বাংলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার যে অবস্থা, সম্ভবত এমন রাস্তা খুলনার কোথাও নেই। যখন রাস্তা ভাল ছিল ময়ুর আবাসিকে লোকজন ঘুরতে আসতো। কিন্তু এখন রাস্তার বেহাল দশার কারণে কেউ আসেনা বললেই চলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেসিসি’র জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নগর উন্নয়ন প্রকল্পের (ক্লাইমেট চেঞ্জ এ্যাডাপটেশন আরবান ডেভলপমেন্ট) পরিচালক ও চীফ প্লানিং অফিসার আবির-উল-জব্বার বলেন বলেন, কেডিএ রাস্তায় থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ না করলে আমরা দরপত্র আহবান করতে পারছি না। তারা রাস্তা বুঝিয়ে দিলে আমরা কাজ শুরু করতে পারবো। জনদুর্ভোগ লাঘবে আপাতত ইটের সোলিংয়ের ব্যবস্থা করেছি।

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মারতোজা আল মামুন বলেন, কয়েকমাস আগে কেডিএর তত্ত্বাবধানে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিছু অংশে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা এখনো আছে। সেটা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে রাস্তাটি সংস্কারে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে টেন্ডার আহবান করা হবে। তারপর সংস্কার কাজ শুরু করতে পারবো।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব এ্যাড. শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, খুলনার প্রতিটি প্রবেশদারের এমন বেহাল দশা। ফলে জনদূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। আমরা বার বার সংশিষ্ট কর্তপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তাগাদা দিচ্ছি।