সখীপুর (টাঙ্গাইল):
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বাঘবেড়-গজারিয়া সড়কের গোহালিয়া খালের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকোতে পারাপার হচ্ছে এলাকাবাসী। তাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ওই কাঁচা সড়কটি ও ভাঙ্গাচোরা নড়বড়ে কাঠের সাঁকোটি পাকাকরণের। কিন্তু সে দাবি এখনও পূরণ হয়নি। ফলে ঝুঁকি নিয়েই ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে জনসাধারণের।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোহালিয়া খালের উত্তরের শেষ সীমানায় কাঠের সাঁকোটিতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে লোকজন। ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো দিয়ে ভারী যানবাহন চলে না। শুষ্ক মৌসুমে কিছু বাইসাইকেল, ঠেলা-ভ্যান গাড়ি চলাচল করে। পায়ে হেঁটে চলাচল করা গেলেও মালামাল পরিবহন করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় গ্রামবাসীদের। তারা ৩/৪ কিমি ঘুরে বিকল্প সড়কে মালামাল পরিবহন করে থাকেন। এতে সাঁকোর দুই পাশের হাজার হাজার মানুষের সময়-অর্থ দুই-ই অপচয় হয়।
গজারিয়া গ্রামের নাছির উদ্দিন বলেন, এই সাঁকোটি প্রথম অবস্থায় বাঁশের সাঁকো ছিল। পরে আমাদের এলাকাবাসীর উদ্যোগে চাঁদা তুলে কাঠের ফালি দিয়ে কাঠের সাঁকোতে রুপান্তর করা হয়েছে। বর্ষার সময় এই সাঁকো পুরোটাই ডুবে যায়। তখন এক কিলোমিটারের সড়ক পারি দিতে প্রায় ৩/৪ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। এই সাঁকোটি যদি পাকাকরণ করা হয়, তাহলে আশেপাশের সকল গ্রামের মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারবে।
ওই গ্রামের অজুফা খাতুন বলেন, আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। সাধারণ মানুষের চলাচল করতে অসুবিধা হয়। সরকার যদি আমাদের জন্য সাঁকোটিে পাকা সেতু করে দিতো, তাহলে খুব উপকার হতো।
স্থানীয় কেজিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়া বলেন, বর্ষাকালে এই সাঁকোটা পানির নিচে প্রায় ডুবে যায়। তখন ঝুঁকি নিয়েই আমাদের পারাপার হতে হয়। এজন্য অনেক সময় আমাদের স্কুলে যাওয়া হয়না। এতে আমরা পড়াশুনায় পিছিয়ে যাই। সরকারের কাছে অনুরোধ যেন এখানে একটি সুন্দর পাকা সেতু নির্মাণ করে দেন, যাতে আমরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারি।
গজারিয়া উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, সেতু না থাকায় আমাদের হাঁট বাজারে যেতে কষ্ট হয়। এমনকি কোন রোগী হাসপাতালে নেওয়া আরও কষ্ট হয়ে যায়। এই এলাকার কৃষিপণ্য ধান, সবজি, কলা, আখ, শাক-সবজি বিক্রি করার জন্য ৩-৪ কিলোমিটার ঘুরে বাজারে যেতে হয়।
স্থানীয় বাঘবেড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, খালের ওই পাড়ে আমাদের স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো দিয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা চলাচল করে থাকে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
এই সাঁকোটার স্থানে যদি স্থায়ীভাবে টেকসই সেতু নির্মাণ করা হতো ছেলে-মেয়েরা নিরাপদে স্কুলে আসা যাওয়া করতে পারতো। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, কাঠের সাঁকোটির উত্তর ও পূর্ব পাশে বেশ কয়েকটি হাট-বাজার, মাদ্রাসা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। হাটুরেদের এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নড়বড়ে কাঠের সাঁকোতে পারাপার করতে হচ্ছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- স্বাধীনতার অর্ধশত বছরেও এই এলাকাটিতে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি, ৩০ মিটারের বাঁশ-কাঠের সাঁকোটিতে পাকা সেতু হলো না! ৩০ মিটারের কাঠের সাঁকোর জন্য ঘুরতে হয় ৩ কিলোমিটার সড়ক!
সখীপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, গোহালিয়া খালের উপর যে কাঠের সাঁকোটি রয়েছে, বর্তমানে এলজিইডির কোন প্রজেক্টে অন্তর্ভুক্ত নেই। এটা ভবিষ্যতে নির্মাণের জন্য আমরা উর্ধবতন কর্তৃপক্ষের কাছে কারিগরি রিপোর্ট প্রদান করবো। আশা করি অনুমোদন সাপেক্ষে এটা পরবর্তীতে উন্নয়ন কাজ সাধিত হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল্লাহ আল রনী বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন
রংপুরে ভেজাল গুড় উৎপাদনের দায়ে ব্যবসায়ীকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
গঙ্গাচড়া যুব ফোরাম ও শিশু ফোরামের উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী উপহার
সমাজ উন্নয়নে স্কাউটদের ভূমিকা শীর্ষক ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত