বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে শুরু হয়েছে এক নজিরবিহীন শুদ্ধি অভিযান। চাকরিবিধি ও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪ হাজার ৯৭১ জনকে ওএসডি (অন স্পেশাল ডিউটি) করা হয়েছে।
ওএসডি হওয়া কর্মীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পেলেও তাদের কোনো দায়িত্ব বা কর্মস্থল থাকবে না। এতে ব্যাংকের ভেতরে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বিপুলসংখ্যক কর্মীকে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই এস আলমের নিজ এলাকা চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা ছিলেন। বর্তমানে ব্যাংকের প্রায় অর্ধেক কর্মীই ওই অঞ্চলের।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, এস আলম গ্রুপের সময়ে অযোগ্য লোক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংককে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাই ব্যাংকের স্বার্থে সবাইকে যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের নির্দেশে গত শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ৫ হাজার ৩৮৫ জন কর্মকর্তাকে ডাকা হলেও মাত্র ৪১৪ জন উপস্থিত হন। তারা আগের মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া ৪ হাজার ৯৭১ জনকে পরদিন থেকেই ওএসডি করা হয়। আর যারা পরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন বা প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছেন, তাদের মধ্যে ২০০ জনকে সরাসরি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
তবে, ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের দাবি, হাইকোর্ট এর আগে নিয়মিত প্রমোশনাল পরীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাংক সেই আদেশ অমান্য করে নতুনভাবে পরীক্ষা নিয়েছে, যা বেআইনি। এ কারণে তারা আবার আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনা দেশে এই প্রথম। সাধারণত পদোন্নতির জন্য মৌখিক পরীক্ষা হয়, কিন্তু কর্মীদের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য আলাদা পরীক্ষা নেওয়া নতুন অভিজ্ঞতা।
তিনি আরও জানান, ইসলামী ব্যাংক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই তাদের নিয়োগ বা যোগ্যতা যাচাই তাদের এখতিয়ারভুক্ত, তবে আইন ও নীতিমালা মেনেই তা করতে হবে।
জানা গেছে, এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর নানা কৌশলে প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা সরিয়ে নেয়। এতে ব্যাংকটি মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলমের নিয়ন্ত্রণ থেকে ইসলামী ব্যাংককে মুক্ত করে নতুন পর্ষদ নিয়োগ দেয়। এরপর থেকেই অযোগ্য নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের বাছাই করতে বিশেষ যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকের ভবিষ্যৎ এখন নির্ভর করছে আদালত, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর। পরীক্ষা ও ছাঁটাই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে হাজার হাজার কর্মী অনিশ্চয়তার মুখে পড়বেন। আর আদালত যদি কর্মীদের দাবিকে গুরুত্ব দেয়, তবে ব্যাংককে নতুন সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
এনএনবাংলা/
আরও পড়ুন
সাবেক এমপি ইকবাল ও তার ছেলের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
ঢাকায় ডেঙ্গুতে ৪ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৮১
দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ১০ কোটি ডলার দেবে এডিবি