সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমী আজ (মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর)। অগ্নি, বায়ু, বস্ত্র, পুষ্প ও মাল্য—এই পাঁচ নৈবেদ্যেই দেবীদুর্গার আরাধনা অনুষ্ঠিত হবে।
মহাঅষ্টমীর প্রধান আকর্ষণ কুমারী পূজা। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে প্রতিবছরের মতো এবারও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে হাজারো ভক্তের উপস্থিতিতে কুমারী পূজা সম্পন্ন হবে। প্রতিষ্ঠানটির সূত্র জানায়, সকাল ৬টা ১০ মিনিটে মহাঅষ্টমী পূজা শুরু হয়। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে পুষ্পাঞ্জলি। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে কুমারী পূজা, আর দুপুর ১২টায় পরিবেশন করা হবে মধ্যাহ্ন প্রসাদ। সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে হবে সন্ধিপূজা এবং রাত ৭টা ১ মিনিটে পূজার সমাপন ঘটবে।
শাস্ত্রমতে, কুমারী পূজার সূত্রপাত ঘটে কোলাসুর নামক অসুর বধের মধ্য দিয়ে। পুরাণ মতে, কোলাসুর স্বর্গ-মর্ত্য দখল করলে দেবতারা বিপন্ন হয়ে দেবীমায়ের শরণাপন্ন হন। তাঁদের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী মানবকন্যারূপে জন্ম নিয়ে কোলাসুরকে বধ করেন। সেই থেকে মর্ত্যে মহাঅষ্টমীর দিনে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।
‘পুরোহিতদর্পণ’সহ বিভিন্ন গ্রন্থে কুমারী পূজার পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। সেখানে জাতি, ধর্ম বা বর্ণভেদ নেই—দেবীজ্ঞানে যেকোনো কুমারী পূজনীয়। তবে সাধারণত ব্রাহ্মণ কন্যাকেই পূজার জন্য বেছে নেওয়া হয়। বয়স এক থেকে ১৬ বছরের মধ্যে হলে কুমারী পূজা করা যায়। অনেকের মতে, ২ থেকে ১০ বছর বয়সী কন্যাদের পূজা করা উত্তম।
বয়স অনুযায়ী কুমারীদের আলাদা নামে ডাকা হয়। যেমন—এক বছরের কন্যা ‘সন্ধ্যা’, দুই বছরের ‘সরস্বতী’, তিন বছরের ‘ত্রিধামূর্তি’, চার বছরের ‘কালীকা’, পাঁচ বছরের ‘সুভগা’, ছয় বছরের ‘উমা’, সাত বছরের ‘মালিনী’, আট বছরের ‘কুব্জিকা’, নয় বছরের ‘কালসন্দর্ভা’, দশ বছরের ‘অপরাজিতা’, এগারো বছরের ‘রূদ্রাণী’, বারো বছরের ‘ভৈরবী’, তেরো বছরের ‘মহালক্ষ্মী’, চৌদ্দ বছরের ‘পীঠনায়িকা’, পনেরো বছরের ‘ক্ষেত্রজ্ঞা’ এবং ষোলো বছরের কন্যা ‘অন্নদা বা অম্বিকা’ নামে পরিচিত
শ্রীরামকৃষ্ণের বাণীতে বলা হয়েছে, সব স্ত্রীলোকই ভগবতীর রূপ। বিশেষ করে শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর প্রকাশ সবচেয়ে বেশি। তাই দুর্গাপূজার অষ্টমী বা নবমীতে সাধারণত পাঁচ থেকে সাত বছরের কন্যাকে প্রতিমার পাশে বসিয়ে পূজা করা হয়। চণ্ডীতেও উল্লেখ আছে—“যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা”—অর্থাৎ দেবী মাতৃরূপে সকলের মধ্যেই বিরাজমান।
এর আগে সোমবার সারাদেশে মহাসপ্তমী যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় উদযাপিত হয়েছে। ভক্তরা পূজামণ্ডপে দিনভর দেবীর আরাধনায় অংশ নেন। ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া দুর্গোৎসব বিজয়া দশমী (২ অক্টোবর) দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যানুসারে, এবার সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে কেবল ঢাকা মহানগরীতেই ২৫৮টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য রাজধানীসহ সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।
এনএনবাংলা/
আরও পড়ুন
আগামী নির্বাচনে আইনের শাসনের দৃষ্টান্ত দেখাতে চায় নির্বাচন কমিশন: সিইসি
মুক্ত হয়ে দেশে ফিরলেন শহিদুল আলম
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া সেনাসদস্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার চান নাহিদ