বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজগুলোতে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। সর্বশেষ একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়নের প্রায় এক ঘণ্টা পর, পুনরায় ঢাকায় ফিরে আসতে বাধ্য হয়। কখনো দীর্ঘ বিলম্ব, কখনো বিকল্প না থাকায় ফ্লাইট বাতিল, আবার রানওয়েতে আটকে পড়া কিংবা চাকা খুলে পড়ার মতো ঘটনা এখন যেন প্রতিদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধু জুলাই-আগস্ট মাসেই অন্তত ১৮ বার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফ্লাইট শিডিউলে বিপর্যয় ঘটে। এর ফলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন, পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির বোঝা বাড়ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থাটির ওপর।
সম্প্রতি বিমানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন শেখ বশিরউদ্দীন। তবে একই সঙ্গে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, একই ব্যক্তি নীতিনির্ধারক ও প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ায় ‘স্বার্থসংঘাতের’ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে।
বিমান বর্তমানে এক কঠিন সংকটের মধ্যে রয়েছে। জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ারলাইনসের সস্তা ভাড়ার কারণে টিকিট বিক্রি কমে গেছে। শ্রমবাজারের ভিসা জটিলতা এবং ভারত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরগামী ফ্লাইটে প্রতিযোগী এয়ারলাইনসের উন্নত সেবার কারণে যাত্রী হারাচ্ছে বিমান। অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থার লোকসান দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকায়।
এরই মধ্যে সরকার নতুন করে আরও ২৫টি বোয়িং কেনার পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে বিমানের বহরে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে—এর মধ্যে ১৬টি বোয়িং (ছয়টি ড্রিমলাইনার, চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭) এবং স্বল্প দূরত্বের রুটে চলাচলকারী পাঁচটি ড্যাশ-৮০০।
তবে কেবল যান্ত্রিক ত্রুটি নয়, উড়োজাহাজে তেলাপোকা, পোকামাকড় ও দুর্গন্ধের ঘটনাও ঘটেছে। এ নিয়ে বিমানের রোম স্টেশন ম্যানেজার সদর দফতরে চিঠি দিয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
প্রকৌশল বিভাগের দক্ষ জনবল সংকটকেও বড় সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত চাপে কাজ করছেন। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং উড্ডয়নের আগে প্রতিটি উড়োজাহাজের প্রযুক্তিগত পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতি, ব্যবস্থাপনা সংকট ও প্রযুক্তিগত বিপর্যয়ের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এনএনবাংলা/
আরও পড়ুন
বিদ্যুতের বকেয়া বিল পরিশোধ করতে প্রধান উপদেষ্টাকে আদানির চিঠি
কেউ কিছু জানে না, এমনও অনেক মিটিং হচ্ছে: আমীর খসরু
মতামত সমন্বয় করে সরকারকে জানাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন: আলী রীয়াজ