October 9, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, October 8th, 2025, 6:34 pm

আতঙ্কের নাম সিলেট-আখাউড়া রেলপথ: জরাজীর্ন লাইন, মেয়াদোত্তীর্ন সেতু ও পুরনো কোচ

সিলেট :

সিলেট-আখাউড়া দৈর্ঘ্য ১৭৯ কিলোমিটার রেলপথ হয়ে ওঠেছে যাত্রীদের জন্য আতঙ্কের নাম। জরাজীর্ন হয়ে পড়া এই সেকশনে রয়েছে ১৩টি মহাঝুঁকিপূর্ণ মেয়াদোত্তীর্ন সেতু। রেলওয়ের ভাষায় যা ‘ডেডস্টপ’। রয়েছে লাইনও ত্রুটি। এসবের সঙ্গে রয়েছে ট্রেনের পুরনো ইঞ্জিন আর বগি ঝুকি। যার ফলে বারবার ঘটছে অসংখ্য দুর্ঘটনা। এতে অনেক যাত্রী প্রাণ দিয়েছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন অঙ্গহানী হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।

সর্বশেষ চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’-এর চারটি বগি গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিলেটের মোগলাবাজারে লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে । এভাবের ঘনঘন দুর্ঘটনার ফলে এই সেকশনে ট্রেনের সময়সূচীও প্রভাব পড়ে।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, সিলেট-কুলাউড়া-আখাউড়া সেকশনে আগে ট্রেন চলত ৭০-৮০ কিলোমিটার গতিতে। এখন সেই গতি অর্ধেকে অর্থাৎ ৪০ কিলোমিটারে নেমে এসেছে।

রেলওয়ের সংশ্লিস্টনরা জানান, পাহাড়ি ও আঁকাবাকা সড়ক হওয়ায় আখাউড়া-সিলেট সেকশনের রশিদপুর থেকে মাইজগাও পর্যন্ত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে জরাজীর্ন লাইন, মেয়াদোত্তীর্ন সেতু ও পুরনো কোচের কারণে এই সেকশনে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের তথ্যমতে, আখাউড়া-সিলেট রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপবন ও কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ হাজার যাত্রী সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম যাতায়াত করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-নসাক সিলেটের সভাপতি ফরুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ট্রেনকে বলা হয় নিরাপদ বাহন। তবে ট্রেনের এই তকমা প্রশ্নের মুখে পড়েছে সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের কারণে। এই সেকশনে ঘনঘন দুর্ঘটনা ট্রেন যাত্রাকে করে তুলেছে অনিরাপদ। ট্রেনলাইন ও ট্রেনের বগি দ্রুত আধুনিকায়নের দাবি জানান তিনি।

সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের অধিকাংশ জায়গায় স্লিপারের নাট-বল্টু খুলে গেছে। আবার কোথাও কোথাও নাট-বল্টু ঢিলে থাকায় রেল লাইন নড়বড়ে হয়ে আছে। রেলের দুই স্লিপারের মাঝখানে নেই পর্যাপ্ত পাথর।

এই সেকশনের সেতুগুলোর অবস্থা আরও নাজুক। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, নির্মাণের ৫০-৫৫ বছর পরই সেতুর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অথচ এ রুটের ৯০ শতাংশ সেতুর বয়সই ৭০ বছর পেরিয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এরকম ১৩টি স্পটকে ‘ডেড স্টপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

দেশের সব রেলওয়ে সেকশন এখন ডুয়েল গেজ লাইন থাকলেও আখাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলের রেল লাইনেই চলছে ট্রেন। ২০১৯ সালে সিলেট-আখাউড়া রেলপথকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরিত করার জন্য একনেকে ১৬ হাজার ১৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে এ প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। এ দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনেও নেমেছে কয়েকটি সংগঠন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট থেকে মোগলাবাজার স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৮টি এবং মোগলাবাজার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে ৫টি সেতু ‘ডেড স্টপ’ হিসেবে চিহ্নিত।

রেলওয়ের প্রকৌশল শাখা জানায়, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অতিঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে রয়েছে- শমসেরনগর-টিলাগাঁও সেকশনের ২০০ নম্বর সেতু, মোগলাবাজার-মাইজগাঁও সেকশনের ৪৩, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর সেতু, কুলাউড়া-বরমচাল সেকশনের ৫ ও ৭ নম্বর সেতু, সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গল সেকশনের ১৪১ নম্বর সেতু, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সেকশনের ১৫৭ নম্বর সেতু, মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯নং সেতু এবং মনতলা-ইটাখোলা সেকশনের ৫৬ নম্বর সেতু। এ সেতুগুলো সংস্কারের কোনো প্রকল্প না থাকায় এখনই এগুলো সংস্কারের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, এই রুটে ট্রেন দুর্ঘটনার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সিলেটের যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে ট্রেন ও বগি বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ের সাথে কথা বলেছি।