December 20, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, October 21st, 2025, 7:44 pm

কালীগঞ্জে কেঁচো সার প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি, কৃষি কর্মকর্তা অভিযুক্ত

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ

গাজীপুরের কালীগঞ্জে কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে অনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনের লক্ষে কমিউনিটি বেইজ ভার্মিকম্পোস্ট বা কেঁচো সার উৎপাদন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ লুটের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের অনিয়মে সরাসরি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় কৃষকদের।

প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের মাঝে কেঁচো সার উৎপাদনে উপজেলায় ১২ টি প্রকল্প রয়েছে। জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নে ১১ টি এবং মোক্তারপুর ইউনিয়নে রয়েছে একটি প্রকল্প।

কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত ভাংতি বিবরনী সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি প্রকল্পের জন্য চারি ৪ হাজার টাকা, ভার্মিকম্পোস্ট হাউজ ১০ হাজার টাকা, আমদানীকৃত কেঁচো ১০ হাজার টাকা, টিন ১৫ হাজার টাকা, কাঠ,বাশ,সিমেন্টের খুটি ও স্ক্রু বাবাদ ১৫ হাজার টাকা, পলিব্যাগ ৫ হাজার টাকা, পলিব্যাগ সিলিং মেশিন দুটি ৬ হাজার টাকা, সাইনবোর্ড পনেরশত টাকা এবং আনুষাঙ্গিক ৩ হাজার ৫শত টাকাসহ মোট ৭০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা রয়েছে। যাহা ১২ প্রকল্পের জন্য মোট ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকারী বরাদ্দ রয়েছে।

২৭ ফুট দৈর্ঘ ও ৮ ফিট প্রস্থ বিশিষ্ট এক চালা টিনের শেড তৈরির জন্য কাঠ, বাশ, সিমেন্টের খুটি, স্ক্রুসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলে ১২ প্রকল্পে এক লাখ ৮০ হাজার কোন হদিশ নেই। শেড তৈরিতে কোন বরাদ্দ নেই বলে কৃষকদের নিজ খরচে শেড তৈরি করতে বলে কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা। এতে প্রতি কৃষককে নিজ অর্থায়নে গুনতে হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ঘরের চাল নির্মানের জন্য ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দের ১২ টি প্রকল্পের বিপরীতে এক লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণের কথা থাকলেও, তা পায়নি কৃষকরা। এই পরিমান অর্থ প্রকল্প শুরুর আগেই লুট করে সেই কৃষি কর্মকর্তা।

কেঁচো সার উৎপাদন প্রকল্পের কৃষকদের কাছে জানতে চাইলে জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের আজমতপুরের কুলথুন এলাকার কৃষক আব্দুছ সাত্তার, দেওতলা এলাকার ফকির মোস্তফা ও আজমতপুর এলাকার মো. মোস্তফা খান প্রতিবেদককে বলেন, প্রকল্পে ধার্যকৃত কাঠ,বাশ,সিমেন্টের খুটি ও স্ক্রু বাবাদ ১৫ হাজার টাকা কৃষি অফিস খরচ করেনি। আমরা নিজ অর্থে ঘরের কাজ করতে হয়েছে। বাকি প্রকল্পে একই অবস্থা করেছে। তারা আমাদের ঠকিয়েছে।

ঘর বা শেড নির্মানে ঠিকাদার নিয়োগে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি ও ঘাপলা। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দরপত্র বা কোটেশন ছাড়াই স্থানীয় সার ব্যবসায়ী কৃষি কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সোহেল এন্টারপ্রাইজ এর রমিজকে কাজ পাইয়ে দিয়েছে। তার মাধ্যমেই যত অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছে সেই কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষি কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, খরচের বিষয়ে ম্যাডাম আমাদেরকে কিছু বলেন না। একাই তিনি সকল সিদ্ধান্ত নেন। শুধুমাত্র প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ও কাজ দেখাশোনা করা ছাড়া আমাদের কোন দায়িত্ব নেই। তাছাড়া কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ বা কিভাবে খরচ হচ্ছে তা আমাদের অজানা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসলিম ২০২০ইং সাল হতে অদ্যাবধি পর্যন্ত একই কর্মস্থলে অবস্থানের করার কারনে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নিতির মাধ্যমে সে রামরাজত্ব কায়েম করেছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। অবিলম্বে তার বদলীর দাবী জানান তারা।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কৃষকদের নিজের টাকা দিয়ে ঘর বা শেড নির্মান করা হয়েছে। বরাদ্দকৃত টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তাই কৃষকদের নিজ অর্থে শেড নির্মানের কাজ করতে বলা হয়েছে। তবে এই খাতে বরাদ্দকৃত এক লাখ ৮০ হাজার টাকা কোন কাজে ব্যয় করেছেন তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেন নি। একাধিক ঠিকাদারের মাধ্যমে মৌখিক দরপত্র কথা বললেও অন্য ঠিকাদারদের নাম ঠিকানা সম্পর্কে কোন তাৎক্ষণিক ব্যাখা দিতে পারে নি।

এলাকার সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কৃষি উন্নয়নমূলক প্রকল্পে এ ধরনের দুর্নীতি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। সরাসরি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা, প্রকল্পের তদারকিতে প্রত্যক্ষ ভ‚মিকা থাকায় অনিয়মের বিষয়টি এতদিন গোপন থাকে। তারা দ্রæত তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা মনে করেন দুর্নীতির মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের সরকারি সহায়তা হরণ করা হয়েছে। তারা প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেরেছি। সরেজমিন পরিদর্শন করব। তবে আর্থিক খাদ থেকে টাকা সরানোর কোন সুযোগ নেই।

কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোঃ জাকির হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে জেলার কর্মকর্তার সাথে কথা বলব। কৃষি কর্মকর্তা দুষি প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা গ্রহন করতে বলব।