October 31, 2025

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, October 30th, 2025, 2:50 pm

নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক: মির্জা ফখরুল

 

জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রস্তাবিত গণভোটকে ‘অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন যে জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন বাস্তবসম্মত নয়। সময়ের স্বল্পতা, বিপুল ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিপুল জনবল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কারণে নির্বাচনের পূর্বে গণভোট আয়োজন অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত উদ্যোগ।

তিনি অভিযোগ করেন, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর উল্লেখ না রেখে, বরং আলোচনায় না ওঠা বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে এসব প্রস্তাব জাতিকে ঐক্যের বদলে বিভক্ত করবে। এমন মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব দীর্ঘ মেয়াদে জাতীয় জীবনে অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ নির্ধারিত সময়সীমায় (২৭০ দিন) সংস্কার সম্পন্ন করতে না পারলে গণভোটে অনুমোদিত বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে—এই প্রস্তাব সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো বিল সংসদীয় অনুমোদন ও রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়া আইনে পরিণত হতে পারে না। এটি সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী।

তিনি আরও বলেন, বিকল্প-২ প্রস্তাবে জুলাই সনদ আদেশকে বিল আকারে না এনে সরাসরি গণভোটে তোলার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে বিভিন্ন দলের মতামত, ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট উপস্থাপনের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।

ফখরুলের অভিযোগ, জুলাই জাতীয় সনদে বিভিন্ন দলের ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এতে প্রমাণিত হয় যে, দীর্ঘ প্রায় এক বছরের সংলাপ ও আলোচনা ছিল সময় ও অর্থের অপচয়—একটি প্রহসন এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভিন্নমত থাকবেই—এ কারণেই সংলাপের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতকে আমলে নেয়নি।

সংস্কার বিষয়ে বিএনপির ৩১ দফা, ২৭ দফা ও ভিশন-২০৩০-এর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাষ্ট্র কাঠামোর প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কার বিএনপির অন্যতম প্রধান এজেন্ডা। এই লক্ষ্যেই বিএনপি ও গণতন্ত্রকামী অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সার্বিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে।

ফখরুল আরও জানান, জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ প্রণয়নের সময় ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী দলগুলো স্পষ্টভাবে জানিয়েছিল—তারা জনগণের ম্যান্ডেট পেলে নিজেদের মতামত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সব অনুষ্ঠান বিটিভিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়েছে। পরে ১৭ অক্টোবর সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা কেবল আলোচনার ভিত্তিতে প্রণীত সনদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছি। তবে সেদিন সনদের চূড়ান্ত কপি আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি।

পরবর্তীতে প্রিন্টেড কপি হাতে পাওয়ার পর দেখা যায়, ঐকমত্যে গৃহীত কয়েকটি দফা অগোচরে পরিবর্তন করা হয়েছে, বলেন তিনি।

উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরকারি-বেসরকারি অফিসে টানানোর বিধান (অনুচ্ছেদ ৪ ক) বিলুপ্ত করার বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল একমত হলেও তা চূড়ান্ত সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাছাড়া সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল বিলুপ্তির প্রস্তাবেও অনিচ্ছাকৃত সংশোধনী আনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান এবং মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

এনএনবাংলা/